আসিফ যখন ১ বছরের শিশু তখন হঠাৎ জ¦র হয়েছিল। সাধারণ জ¦র ভেবে বাবা-মা তখন কোন গুরুত্ব দেননি। যে কারণে ক্রমেই অসুস্থ হতে থাকে সে। হতদরিদ্র বাবা-মা টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে ব্যার্থ হয়। কিছুদিন পরেই আসে আরেক ঝড়। কারণ মা বাবার মধ্যে অবনাবনি শুরু হয়। তখন তাদের ৩ ভাইবোনকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন মা। সর্বশেষ তাদের গতি হয় হতদরিদ্র নানা বাড়ি যশোরের রহমতপুরে। মা আবার স্বামীর বাড়ি আসলেও জায়গাতো হয়েইনি বরং বিচ্ছেদ ঘটেছে। এরপর থেকে শুরু হয় তাদের চরম অসহায়ত্ব।
আসিফের মা শাহানারা বেগম জানান, বিচ্ছেদ হওয়ার পরে আসিফদের বাবা ৩ সন্তানের কোনদিন খোঁজখবর নেইনি। বাবা আক্কাস আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। ভাইয়েরা থাকলেও সবাই পৃথক সংসার করছেন। তিনি আরও জানান, মা হয়ে সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে যশোর শহরে একটি ঝুপড়ি ঘর ভাড়া নিয়ে পরের বাসায় বাসায় কাজ করে প্রতিবন্ধী আসিফসহ ৩ সন্তান নিয়ে খেয়ে না থেয়ে বেঁচে আছি। পাশে কেউ না থাকায় অত্যান্ত মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। প্রতিবন্ধি আসিফের বয়স এখন ১১ বছর। নিজের বুকের ধন আসিফ চলাফেরা করতে পারে না। কথা বললেও বোঝা যায় না। চিকিৎসক বলেছেন আসিফের লিভারে সমস্যা। তবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারলে সুস্থ হয়ে যাবে আসিফ। টাকার অভাবে নিজের সন্তানকে চিকিৎসা করাতে পারছি না। প্রতি মাসে আসিফের ওষুধ কিনতে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়। আমি বাবার বাড়ি যশোরের রহমতপুরে ভোটার হলেও সন্তানদের পরিচয় তাদের বাবার বাড়ি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ঝনঝনিয়া গ্রামের ঠিকানায়। বেশ কিছুদিন আগে ওখানকার ইউনিয়েনের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন ও ওই গ্রামের লোকজনের সহযোগিতায় অসহায় আসিফের নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছিলেন। সেখানেও ভাগ্য সঙ্গে নেই। এ পর্যন্ত মাত্র এক চালান আসিফের নামে ৪ হাজার টাকা পেয়েছি। পরে আর টাকা আসেনি। অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখলাম একাউন্টে আর কোন টাকা নেই। আসিফের বাবার বাড়ি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ঝনঝনিয়া গ্রামের বাসিন্দা শামীম হোসেন জানান, আসিফ তার প্রতিবেশী শিকজান হোসেনের ছেলে। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটি প্রতিবন্ধী। বাবা মায়ের বিচ্ছেদের পর তারা অন্যস্থানে চলে গেছে। কিন্তু অসহায় আসিফসহ তাদের ৩ ভাই বোনের বাবার ঠিকানায় বহাল আছে। ফলে তাদের সব কিছু এখানকার ঠিকানায়।
কালীগঞ্জের কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন জানান, ঝনঝনিয়া গ্রামের প্রতিবন্ধী আসিফ অনেক অসহায়। বাবা মায়ের বিচ্ছেদের পর তাদের আরও অসহায়ত্ব বেড়েছে। তারা এখানে থাকে না কিন্তু এখানকার নাগরিক হওয়ায় তাদের খুঁজে বের করে তার নামে প্রতিবন্দী কার্ড করে দিয়েছিলেন। এখন শুনছি ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। কেন বন্ধ হলো তা খতিয়ে দেখছেন।