অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের দৃষ্টিনন্দন স্থানের মধ্যে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টের কুরমা বনবিট একটি অরণ্যঘেরা গহিন দুর্গম পাহাড়। এর আয়তন ৭ হাজার ৯৭০ একর। কুরমা বনবিটের পাহাড়ের পশ্চিমদিকে চাম্পারায় চা বাগান, পূর্ব-দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত। ঢাকা থেকে প্রায় ২৬০ কিমি. এবং কমলগঞ্জ উপজেলাসদর থেকে প্রায় ৩০ কিমি. দক্ষিন-পূর্বদিকে অবস্থিত। কমলগঞ্জ থেকে প্র্রায় ১ ঘন্টার পথ লোকাল বাস, জীপ, লাইটেস কিংবা পাইভেট কার নিয়ে চাম্পারায় চা বাগানে পৌছতে হবে। কুরমা চেকপোষ্ট পর্যন্ত পাকা সড়ক থাকলেও সেখান থেকে চাম্পারায় চা বাগান পর্যন্ত মাটির রাস্তা। সেখান থেকে আবার প্রায় ৫ কিমি. দূরে সীমান্ত এলাকায় ত্রিপুরা আদিবাসীদের পল্ল¬ী বন বিভাগের কুরমা বিটের অরণ্যঘেরা দুর্গম পাহাড়ী এলাকা তৈলংবাড়ী। অবশ্য সিএনজি নিয়ে সেখানে গেলে তৈলংবাড়ী পর্যন্ত অনায়াসে পৌঁছা যাবে। তৈলংবাড়ীর আদিবাসীদের সাহায্য নিয়ে আপনাকে ট্রেকিং করতে নামতে হবে। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর শুরুতে আপনার দু’চোখের সামনে ভেষে উঠবে পাহাড় থেকে ধোঁয়ার মতো ঘন কুয়াশা ভেসে উঠার অপূর্ব দৃশ্য। মনে হবে যেন ওই নয়নাভিরাম পাহাড় আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। হাটতে হাটতে আপনি একসময় পৌছে যাবেন কলাবন চা শ্রমিক বস্তিতে। প্রায় ৮ কিমি. দুর্গম পাহাড়ের গায়ে হামহাম জলপ্রপাত যাওয়ার সহজ রাস্তাটি স্থানীয় লোকেরা আপনাকে বাতলে দেবে। কলাবনপাড়া থেকে রওনা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জারুল ও বেত বাগানে দেখা পাবেন বানরের দল। জারুল, চিকরাশি ও কদম বনায়নের চারাগুলোর সারিবদ্ধ লাগানোর ফাঁকে ফাঁকে হাজারো প্রজাপতি ডানা মিলিয়ে উড়ে যাচ্ছে বহুদূরে। দেখে বেশ ভালো লাগবে আপনার চারদিকে গাছগাছালি ও প্রাকৃতিক বাঁশবনে ভরপুর আর ডলু, মুলি, মিটিংগা, কালি ইত্যাদি অদ্ভুত নামের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ বাগানগুলোর গুলোর সাথে পরিচিত হবেন। পথের কিছু জায়গায় বন কলাগাছগুলো দেখে মনে হবে কে যেন সুন্দর, সুশৃংখল এবং সারিবদ্ধভাবে লাগিয়ে রেখেছে। ঝিরি পথে হেঁটে যেতে যেতে চোখে পড়বে ডুমুর গাছের শাখায় চশমা বানরের দল। ঝিরিপথ পাথরের ওপর হাঁটতে খুবই কঠিন এবং কষ্টের, মাঝেমধ্যে কোমর পানি আর সিমেন্টের ঢালাই করার মতো দেখতে এবং খুবই পিছলে, তাই ট্রেকিং করার সময় নিজের সুবিধার জন্যসবাইকে একটি করে বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে পাহাড়ী এই পথে খুবই সাবধানে হাঁটতে হবে। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা ঝিরি পথে ট্রেকিং করা খুবই কঠিন, ডানে-বামে তাকানো মুশকিল। ঝিরি পথ হাঁটতে হাঁটতে বড় বড় পাথর চোখে পড়ল। সুমধুর পাখির কলরবে মন ভরে যায়। দূর থেকে কানে ভেষে উঠবে বিপন্ন বনমানুষ উল্লুক গিবনসের ডাক। এভাবেই হাটতে হাটতে একসময় আপনি পৌঁছে যাবেন আপনার লক্ষ সেই হামহাম জলপ্রপ তের খুব কাছাকাছি। কিছু দূর থেকে শুনতে পাবেন হামহাম জলপ্রপাতের শব্দ। কাছে গিয়ে দেখতে পাবেন প্রায় ১৩০ ফিট ওপর হতে জল হামহাম শব্দে জলপপাতের সেই অপূর্ব দৃশ্য। সেখানে কিছুক্ষন কাটানোর পর আপনাকে নিতে হবে ফেরার প্রস্তুুতি। কারণ বেশীক্ষণ সেখানে অবস্থানের কারণে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে পাহাড়ে ঘন কালো অন্ধকারে রাস্তা হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা শতভাগ। অপরদিকে বন্যপ্রাণীদেও আক্রমনেরও শিকার হতে পারেন। ঢালু ও পিচ্ছিল পাহাড়ী পথ বেয়ে উপওে ওঠা কষ্ট হলেও সহজ, কিন্তু পাহাড় হতে নিচে নেমে আসা খুবই বিপজ্জনক ও কঠিন। তাই ঝিরি পথে এসে সবাইকে কাছাকাছি থেকে ট্রেকিং শুরু করতে হবে। প্রায় সাড়ে চারঘন্টা পর আপনি পৌঁছে যাবেন কলাবনে। যারা অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষ তারা যদি এ জায়গায় যেতে ইচ্ছে করেন তাহলে তাদের কমলগঞ্জ অথবা শ্রীমঙ্গল শহর হতে যানবাহন ভাড়া করতে হবে ভোর ছয়টার মধ্যে। তাহলে চাম্পারার চা বাগানে কলাবনপাড়ায় পৌঁছতে পারেন সাড়ে সাত বা আটটার মধ্যে। কলাবনপাড়া হতে হামহাম জলপ্রপাতে যেতে-আসতে প্রায় ৫ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। যারা এ ধরনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, মনোরম পরিবেশ, প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়া সুন্দর জায়গায় যেতে চান তারা চলে যেতে পারেন এ নয়নাভিরাম হামহাম জলপ্রপাতে।