কাপ্তাই হ্রদের কচুরিপানায় আটকে পড়া পর্যটকদের ৯ ঘন্টা পর উদ্ধার করে রাঙ্গামাটি শহরে নিয়ে আসলেন রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ সদস্যরা। মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে আসা পর্যটকরা কাপ্তাই হ্রদে বোট যোগে সুভলং ঝর্ণায় যাওয়ার পথে বিশাল কচুরিপানায় আটকা পড়ে পর্যটকরা। শত চেষ্টা করেও ছুটতে না পারায় সন্ধ্যায় পুলিশের জাতীয় সেবা ৯৯৯ ফোন করে। ৯৯৯ থেকে রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ কন্ট্রোল রুম কল পেয়ে রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন এর নির্দেশনায় ঘটনাস্থলের কাছে পুলিশ ক্যাম্পে খবর পৌঁছায় পুলিশ কন্ট্রোল রুম এবং পর্যটকদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে। পরে রাত সাড়ে ৯ টায় তাদের উদ্ধার করে রাঙ্গামাটি পলওয়েল পার্কে নিয়ে আসা হয় পর্যটকদের।
আটকে পড়া পর্যটকরা জানান, মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে এস.এম. রিয়াদ জিলানীসহ আট জনের দলটি রাঙ্গামাটি ভ্রমণে আসে। রাঙ্গামাটিতে বড়াতে এসে কাপ্তাই হ্রদে টুরিস্ট বোট নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে রাঙ্গামাটির সুভলং ঝর্নায় যাওয়ার পথে কচুরীপানায় আটকে পড়ে ৮জন পর্যটক। দীর্ঘ ভ্রমণ করে রাঙ্গামাটিতে এসে সারাদিন কিছু না খাওয়ার ফলে সবারই ক্রান্তি চলে আসে এবং সবাই শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যায়। এ সময়ে পাশ দিয়ে যাওয়া মানুষজনের কাছে খাবারের জন্য আকুল হয়ে পড়ে পর্যটক দল। খাবারের আকুলতা বুঝাতে গিয়ে পাশ দিয়ে যাওয়া এক পর্যটককে মিনতি করে বলে, আপনার হাতের এক লিটার পানির বোতলটা আমাকে দিন, আমি আপনাকে ৫০০ টাকা দিব কিন্তু ৫০০ টাকার বিনিময়েও পানির বোতল পাওয়া যায় নাই।
এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে দেখে পর্যটকদের মনে ভয় জাগতে শুরু করে, এখন কি হবে? আমরা কিভাবে এ স্থান থেকে উদ্ধার হব? এরূপ নানাবিদ চিন্তা নিজেদের মধ্যে ঝেঁকে বসে। পরে পুলিশের দেড় ঘন্টা চেষ্টায় উদ্ধার পায় পর্যটকরা।
রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন জানান, কাপ্তাই লেকের অনিন্দ্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে স্থানীয় একটি ভাড়া টুরিস্ট বোট নিয়ে শুভলং ঝর্ণায় রওনা। শুভলং ঝর্ণার অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করে রাঙ্গামাটি শহরে পৌঁছানোর উদ্দেশ্য দুপুর ১২টার দিকে রওনা করে পর্যটক দল। কিন্তু পথেই ঘটে বিপত্তি, এরইমধ্যে কাপ্তাই লেকে সুবিশাল কচুরিপানার একটি ঝাঁক পর্যটকদের বোটকে আটকে ধরে। শত চেষ্টা করেও বোট চালক এই কচুরিপানার ঝাঁক অতিক্রম করতে পারেনি। বোট চালকের প্রাণপণ চেষ্টার একপর্যায়ে বোটের পাখা নষ্ট হয়ে যায়। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত কচুরিপানা পরিষ্কার করে নিজেদের উদ্ধারে চেষ্টা করে পর্যটক দল। দীর্ঘ ভ্রমণ করে সারাদিন কিছু না খাওয়ার ফলে সবাই শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যায়।
এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে দেখে পর্যটকদের মনে ভয় জাগতে শুরু করে। উপায়ন্তর না দেখে, বাংলাদেশ পুলিশের জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল দেয় তাদেরই একজন। ৯৯৯ থেকে রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ কন্ট্রোল রুম কল পেয়ে পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন এর নির্দেশনায় ঘটনাস্থলের কাছে পুলিশ ক্যাম্পে খবর পৌঁছায় পুলিশ কন্ট্রোল রুম এবং পর্যটকদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে। পুলিশ কন্ট্রোল রুমের নির্দেশনা পেয়ে জারুলছড়ি ক্যাম্পের চৌকস পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে নেমে পড়ে।
পুলিশ সদস্যরা নিজেদের জীবনের মায়া তুচ্ছ করে কাপ্তাই লেকে সাঁতার কেটে কচুরিপানার ঝাঁকের কাছে পৌঁছায়। কচুরিপানার কাছাকাছি গিয়ে ধারালো দা দিয়ে কচুরিপানা কাটতে কাটতে সামনের দিকে এগুতে থাকে। দীর্ঘ দেড় ১ ঘন্টা কচুরিপানা পরিষ্কার করে পর্যটকদলের কাছে পৌঁছে পুলিশ সদস্যরা। উদ্ধার করে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের বিস্কুট, পানি প্রভৃতি দিয়ে পর্যটকদের ক্ষুধা নিবারণ করে। পুলিশের এ সহমর্মিতা দেখে পর্যটকরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে। পরে জারুলছড়ি পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা রাত সাড়ে নয়টার দিকে জেলা পুলিশের পলওয়েল পার্কে পর্যটকদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
এসময়, বাংলাদেশ পুলিশ, জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ ও রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পর্যটকরা বলেন, “চারদিকে যখন ঘোর অন্ধকার দেখতে ছিলাম তখনই আলোর পথ দেখিয়ে নিজেদের নতুন জীবন দান করলো বাংলাদেশ পুলিশ। তাই বাংলাদেশ পুলিশ তথা রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ।”