বিদ্যালয়ের নাম, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাইশা ইউনিয়নের ঘুঘুমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের মেঝেতে বন্যার পানি হাঁটু পরিমান হয়েছিল। সে পানি নেমে যাওয়ায়, বর্তমানে বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোথাও হাঁটু ও কোথাও কোমড় পরিমান পানি বিদ্যমান। এছাড়াও বিদ্যালয়ে যাতায়াতের একমাত্র সড়কে গলা পরিমান পানি থৈ থৈ করছে। চাকুরীর স্বার্থে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষীকারা বিদ্যালয়টিতে হাজির হয়েছেন। কোভিড-১৯ এর কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর খোলা হবে। সাড়া দেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদানের পূর্ব প্রস্তুতি চললেও উপজেলার বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানের প্রস্তুতি কেমন চলছে এ সম্পর্কে গত বুধবার দুপুরে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে উল্লিখিত দৃশ্য চোখে পরে। উপজেলা শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একমাত্র ওই বিদ্যালই না বন্যা ও যমুনা নদীর ভাঙ্গনের কারণে কম পক্ষে আরো ৩০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একই অবস্থা। পাঠ দানের পরিবেশ বলতে কিছুই নেই। বিদ্যালয়গুলোতে বন্যার পানি ঢুকে পরার কারণে মেঝে ও চেয়ার-ব্রেঞ্চের উপর পলি-কাদা মাটির আস্তরন, স্যাঁত-স্যাঁতে পরিবেশ। ক্যাম্পাসে ৫ ইঞ্চি পরিমাণ কাঁদা মাটিতে পরিপূর্ণ। খালি পায়ে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পরেছে। সেখানে কোমলমতী ছাত্র-ছাত্রীরা কেমনে লেখা-পড়া করবে তা স্থানীয়দেরকে ভাবিয়ে তুলেছে অনেকেই। কাজলা ইউনিয়নের ময়ুরের চরের মোকলেছার রহমান বলেন, বিদ্যালয় এবং ক্যাম্পাসে কাঁদা মাখা মাটিত রয়েছেই এর মধ্যেই আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে লেখা-পড়া করতে হয়। কোন অসুবিধা হবে না। দীর্ঘ দিন পর বিদ্যালয় খুলছে শুনে কোমলমতী শিক্ষার্থীদের মনে খুশির দোলা লেগেছে। ওই কাঁদা মাখা মাটির মধ্যেই ক্লাস করবে তারা। ঘুঘুমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ছাত্র-ছাত্রী ১০৯ জন। শিক্ষক রয়েছেন ৫ জন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যালয় খোলার নির্দেশনা পেয়েছি। সে হিসেবে বিদ্যালয়ে প্রস্তুতি নিতে এসে দেখি বিদ্যালয়ের চারিদিকে পানি, চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ কাঁদা মাখা। তবে বিদ্যালয়ের মেঝেতে কিছু ব্লিসিং পাওডার ছিটিয়ে দিয়েছি। বিদ্যালয়ের চারিদিকে পানির কারণে মনে হচ্ছে না ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করানো যাবে। তবে বিদ্যালয় থেকে ৫০০ গজ দূরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঘেষে পশ্চিম পার্শ্বে টিনের ঘর আছে। তাতে ছাত্র-ছাত্রী সংকুলান না হলে পার্শ্বে ঈদ-গা মাঠে তাবু টানিয়ে পাঠ দানের চিন্তা-ভাবনা করছি আমরা। অপরদিকে চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের ভাঙ্গরগাছা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি টিন সেট ভবন নির্মান করা হয়েছিল। গত বছর চলতি বন্যায় সে ভবনটি নদী গর্ভে বিলিন হওয়ায় বিদ্যালয় স্থানে যমুনা নদীর অথৈ পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো: মাছুদ রানা বলেন, বিদ্যালয়ে মোট ৯৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদেরকে এখন কোথায় পাঠদান করাবো ভেবে শেষ করতে পারছিনা আমরা। স্থানীয় কমিটির সাথে আলোচনা করে ঘর-দরজা তুলতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে। এসময়ের মধ্যে চরের যে কারো বাড়িতে পাঠদান করানো হতে পারে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: গোলাম কবির বলেন, সারিয়াকান্দিতে বন্যা ও নদী ভাঙ্গন নতুন কোন সমস্যা নয়। এটি পুরানো সমস্যা। বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের কারণে যেসব বিদ্যালয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে আমরা সেখানে স্থানীয়ভাবে আলোচনা করে বিকল্প ব্যবস্থায় পাঠদান চালু রাখা হবে।