উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বন্যার পানির চাপ ও মেঘনা নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলাসহ রামগতি ও কমলনগর উপজেলার কয়েকটি এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। অন্যদিকে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গন আরো প্রকট আকার ধারন করছে। হুমকির মুখে রয়েছে ১০ কিলোমিটার এলাকার কয়েকটি গ্রাম। অমাবস্যার প্রভাবে নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে আড়াই থেকে তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়ে পানিতে তলিয়ে রয়েছে মানুষের ঘর-বাড়ী। পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে অন্তত ৫ হাজার হেক্টর আমনের আবাদ ও বীজতলা। পানিতে তলিয়ে রয়েছে মানুষের ঘর-বাড়ী। এতে করে দূর্ভোগ আরো বাড়ছে কয়েকগুন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে এভাবে প্রতিনিয়তই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ফলে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়ে।
স্থানীয়রা জানায়, সদর উপজেলার চররমনী মোহন এলাকাসহ কমলনগর উপজেলার চরমার্টিনের নাছিরগঞ্জ সড়কের ওপর দিয়ে হুহু করে মেঘনার জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে ঘরের খাট কিংবা চৌকিতে। পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে রান্না ঘরের চুলাও। রামগতি উপজেলার চরগাজী, বড়খেরী, বিবিরহাট, চরগোসাই, চরআলগী, চরমেহার আলেকজান্ডার, বালুরচর, মুন্সিরহাট, চর আবদুল্যাহ ও কমলনগরের লুধুয়া, সাহেবেরহাট, পাটওয়ারীরহাট, ফলকন, মতিরহাটসহ কয়েকটি এলাকার বিভিন্ন এলাকা জোয়ারের পানিতে ভাসছে।
সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের বাসিন্দা মিন্টু বলেন, দুপুরের দিকে মেঘনা নদীর অতিরিক্ত জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে। এতে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। বিকেলের দিকে পুনরায় পানি নেমে যায়। জোয়ারের পানি অনেকের রান্নাঘরের মাটির চুলোয় ঢুকে পড়ায় রান্নার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
রামগতির মেঘনা নদী বেষ্টিত বিচ্ছিন্ন চর আবদুল্যাহ ইউনিয়নের চর গজারিয়া এলাকার বাসিন্দা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, গত তিনদিন থেকে অমাবস্যার প্রভাবে অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে তাদের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিমজ্জিত হয়ে যায়। কয়েকঘণ্টা পর পুনরায় জোয়ারের পানি নেমে যায়। চলতি বছরে চার বার জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। রামগতির বয়ারচর থেকে কমলনগর উপজেলার মতিরহাট পর্যন্ত মেঘনী নদী সংলগ্ন প্রায় ৩৭ কি. মি. এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় অতিরিক্ত জোয়ারের পানি প্রতিনিয়ত উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করে।
রামগতি পৌরসভার বাসিন্দা জাফর আহমদ গনি জানান, জোয়ারের পানি নামার সময় নদীর তীরে ভয়াভহ ভাঙ্গন দেখা দেয়। এ ছাড়া রাস্তাঘাট ডুবে লোকালয়ে প্রবেশ করছে পানি। লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে অন্তত ৫ হাজার হেক্টর আমনের আবাদ ও বীজতলা।
কমলনগরের চরমার্টিন ইউনিয়নের নাসিরগঞ্জ এলাকার শহিদ উল্যা ও গৃহবধু মরিয়ম আক্তার বলেন, গত দুইদিন থেকে জোয়ারের পানি তার কাঁচা ঘরে ঢুকেতেছে। পানি নামার সময় ঘরের ভিটার মাটি ধুয়ে চলে যায়।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহম্মেদ বলেন, সাধারণত অমাবস্যা বা পূর্ণিমার প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির স্তর আড়াই থেকে তিন ফুট বৃদ্বি পায়। যার কারণে এ সময়টাতে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হলে জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পাবে উপকূলের বাসিন্দারা।