সরকার সারাদেশের ভূমি মালিকদের ডাটা ব্যাংক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।আর ডাটা ব্যাংক হলে ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ দূর হবে। কারণ ছোট্ট এক টুকরো জমির মালিকের নামও ডাটা ব্যাংকে থাকবে। ফলে জবরদখল, জাল দলিল করে অন্যের জমি আত্মসাৎ করার সুযোগ থাকবে না। বিদ্যমান ভূমি ব্যবস্থাপনায় সারাদেশে জমির মালিকের সংখ্যা জানার সুযোগ নেই। এমন পরিস্থিতিতে কার নামে কোন কোন স্থানে কত পরিমাণ জমি আছে ওই তথ্য সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেজন্যই ভূমি মন্ত্রণালয় সারাদেশের ভূমি মালিকদের ডাটা ব্যাংক তৈরি করতে যাচ্ছে। আর এই কাজটি শেষের পর যারা জমির নতুন মালিক হবে, তাদের নামও ডিজিটাল পদ্ধতিতে ডাটা ব্যাংকে যুক্ত হবে। এ ডাটা ব্যাংক ভূমি নিয়ে বিরোধ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত দূর করতে ভূমিকা রাখবে। ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সর্বশেষ আরএস জরিপ অনুযায়ী বর্তমানে সারাদেশে জমির প্রায় ৫ কোটি খতিয়ান আছে। আর একেকটি খতিয়ানের জমির মালিক ৫জন বা তার চেয়ে কমবেশি রয়েছে। কিন্তু আরএস জরিপ অনুযায়ী সারাদেশে জমির মোট মালিকের সংখ্যা জানার উপায় নেই। বর্তমানে যে খতিয়ানগুলো তৈরি হয়, তার মধ্যে এমনও রয়েছে যে, একটি খতিয়ানে ৫টি দাগ উল্লেখ রয়েছে এবং সেখানে ৫ জন মালিকের নামও উল্লেখ আছে। তাতে প্রত্যেকের চারআনা, আটআনা মালিকানার কথাও বলা থাকে। কিন্তু ৫টি দাগের প্রতিটি দাগ থেকে চারআনা-চারআনা করে নিয়ে ভোগ করা কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। মূলত বাস্তবে ভূমির মালিকরা এক জায়গা থেকে ভোগ করে, অথচ কাগজ পাঁচ দাগের থাকে। ফলে যখনই মামলা-মোকদ্দমার ঘটনা ঘটে, তখনই সংশ্লিষ্টরা বিপদে পড়ে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারি মালিকানাধীন জমির ডাটাবেজ তৈরি হলে তাতে খাস, পরিত্যক্ত, অর্পিত সম্পত্তি, জলমহাল, লবণ মহাল, চিংড়ি মহালসহ সরকারি মালিকানাধীন সব জমির তথ্য থাকবে। ওই ডাটা ব্যাংকটি তৈরির কাজ চলছে। তাহলেই সরকারি জমি, সম্পত্তি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বেহাত, বেদখলের সুযোগ থাকবে না। ওই ডাটা ব্যাংকের কাজ শেষ করে বেসরকারি মালিকানাধীন জমির ডাটাবেজ তৈরি শুরু করা হবে। যা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ব্যাপকভিত্তিক একটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। ওই লক্ষ্যে আগামীতে বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে নামে সর্বশেষ একটি সার্ভে কার্যক্রম শুরু করা হবে। বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায় পরীক্ষামূলক জরিপ হবে। সেটি হবে পরিপূর্ণ ডিজিটাল জরিপ। ড্রোনের মাধ্যমে ওই জরিপ করা হবে। ওই কাজে বেসরকারি খাতকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ওই জরিপের পলিসি হবে- কোনো প্লট একজনের সঙ্গে অন্যজনের শেয়ারিং থাকবে না। কোনো দাগেরও শেয়ারিং থাকবে না। সামান্য স্থানের কিংবা ছোট্ট একটি দোকানঘরেরও আলাদা দাগ নম্বর সৃজন করা হবে।
সূত্র আরো জানায়, যে পৈতৃক সম্পত্তি ভোগ করার ক্ষেত্রে ভাইবোনরা একত্রিত থাকতে পারবে না, সেই জমি ওয়ারিশ সূত্রে যৌথ মালিকানাধীন ও মালিকের সংখ্যা উল্লেখ থাকবে। ওই যৌথ মালিকানাধীন জমির কোনো অংশ বিক্রি করতে চাইলে প্রথমে তাদের মধ্যে বণ্টননামা সম্পন্ন করতে হবে। আর যে অংশটুকু বিক্রি করা হবে, ওই অংশটুকু পৃথক করে তারপর বিক্রি করতে হবে। আর যতটুকু বিক্রি করা হবে সেটির আলাদা দাগ নম্বর পড়বে। আর প্রতিটি খতিয়ান হবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুযায়ী ব্যক্তিভিত্তিক। যার যার নামে আলাদা খতিয়ান থাকবে। ওই পদ্ধতিতে একজন জমি মালিকের এনআইডি নম্বর সার্চ করলে সারাদেশে তার নামের সব খতিয়ান বেরিয়ে আসবে।
এদিকে ৮ সেপ্টেম্বর ৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করতে যাচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়। সেদিন প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর তেজগাঁওয়ে নির্মিত ভূমি ভবন কমপ্লেক্স, ৯৯৫টি পাকা ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ১২৯টি পাকা উপজেলা ভূমি অফিস, অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ ও সরকারি ভূমি ডাটা ব্যাংক উদ্বোধন করবেন।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আগামী কিছুদিনের মধ্যে সরকারি জমির ডাটা ব্যাংকের কাজ সম্পন্ন করা হবে। ওই কাজটি শেষ করে সারাদেশের বেসরকারি মালিকানাধীন জমির ডাটাবেজ তৈরির কাজ শুরু হবে।
এ প্রসঙ্গে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানান, এক সময় ভূমির প্রতিটি কার্যক্রম ডিজিটাইজেশনের আওতায় আসবে। সেদিন বেশি দূরে নয়। ইতোমধ্যে ই-নামজারিসহ নানা কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করা হচ্ছে। তাতে জনগণকে সশরীরে ভূমি অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। ফলে মানুষের সময়ের অপচয় হচ্ছে না এবং বাড়তি অর্থ খরচ থেকে রক্ষা পাচ্ছে।