''জয়ীতা অন্বেষণে বাংলাদেশ" এর আওতায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে "সফল জননী" নারী হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরে কালিয়াকৈর থেকে কুলসুম বেগম নির্বাচিত হয়ে সরকারী ভাবে সম্মাননা ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট পেয়েছেন। তার প্রত্যেকটি সন্তান উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেদের কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের কারণে কুলসুম বেগম উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়ীতার পুরস্কার পেয়েছেন ।
মোসা: কুলসুম বেগম গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের পাবরিয়াচালা গ্রামের আতোয়ার রহমানের স্ত্রী।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায় ,কুলসুম বেগম ১৯৬২ সালে মনতলা গ্রামের সম্ভ্রান্ত কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। খুব ছোটবেলায় পিতৃ মাতৃহীন হয়ে ভাইয়ের সংসারে খুব কষ্ট করে বড় হয়েছেন তিনি। দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭৫ সালে তাকে পাশের গ্রামের আতোয়ার রহমান সাহেবের সাথে বিবাহ দেয়া হয়।তারপর তিনি একে একে চার মেয়ে ও তিন ছেলে সন্তানের জননী হন।
অত:পর ২০০১ সালে তার স্বামী পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে ছোট ছেলে-মেয়েদের রেখে যান এতিম করে। কুলসুম বেগমের স্বামী পূর্বে একটি বিয়ে করছিলেন সেখানেও ছেলে-মেয়ে রেখে যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর স্বামীর আগের সন্তানরা কুলসুম বেগমকে ও তার সন্তানদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করতে থাকে এবং স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করতে থাকে। প্রতিকূল পরিবেশে নানাভাবে নিষ্পেষিত হতে থাকেন তিনি। অতি কষ্টের সংসারে তার ছেলে মেয়েরা টিউশনি ও ছোট-খাটো চাকরি করে নিজেদের পড়াশোনার খরচ চালাতে থাকে। তবুও থেমে থাকেননি আত্মপ্রত্যয়ী সংগ্রামী মা ও তার সন্তানেরা। কুলসুম বেগম এর অদম্য ইচ্ছা, সাহসীকতা ও উৎসাহ সন্তানদের পড়াশোনার গতি বাড়িয়ে দিতো প্রতিনিয়ত। আর সন্তানেরা মা'য়ের কষ্ট মুচনে ধীরে ধীরে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে যেতে সকলেই গ্রাজুয়েশন শেষ করেন।
কুলসুম বেগমের স্বপ্ন ছিল তার সন্তানেরা যেন তার মত কষ্ট না করে শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও যেন তার সন্তানরা সুশিক্ষিত ভালো মানুষ হতে পারে।
বর্তমানে কুলসুম বেগমের সাত সন্তানের মাঝে বড় মেয়ে হাসনা আক্তার জবেদ আলী সরকার হাই স্কুল এর সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। মেজো মেয়ে জোহরা আক্তার একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করছেন, সেজো মেয়ে নুরজাহান আক্তার সরকারী ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ে চাকরি করছেন এবং চতুর্থ মেয়ে নাজমা আক্তার একটি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন এবং সেই সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এর উন্মুক্ত শাখার খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন। যথাক্রমে তিন ছেলে কামরুজ্জামান জসিম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন, মেজো ছেলে কামরুল হাসান নাজমুল আইনজীবী হিসেবে গাজীপুর জজ কোর্টে আছেন এবং তৃতীয় ছেলে শাহাদাত কবির শাওন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কর্মরত আছেন।
তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তার সন্তানেরা বর্তমানে স্ব-স্ব অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত। সেইসাথে সকল সংগ্রামী মা'য়েদের জীবনের জন্য হয়ে উঠেছেন আদর্শ।