পটুয়াখালীতে অবস্থিত অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সাথে রাজধানী ঢাকা ও বরিশালের যাতায়াত আরও সহজতর হচ্ছে। বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের দুমকী উপজেলার লেবুখালী ‘পায়রা সেতু’র নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসে এই সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হওয়ার আশা করছে কর্তৃপক্ষ। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লং জিয়াং রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ নিয়ে সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পায়। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ বিনিয়োগে ‘কর্ণফুলী সেতু’র আদলে দেশে দ্বিতীয়বারের মতো নির্মিত হচ্ছে ‘এক্সট্রা ডোজ প্রি-স্ট্রেসড বক্স গার্ডার’ টাইপের এই সেতু। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এদিকে সেতুটি সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলে ফেরি পারাপারের চিরাচরিত দুর্ভোগ ঘুচে যাবে। সেতুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার দ্বারও খুলে যাবে বলছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বারবার সেতুর নির্মাণ ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির তিন দফা আবেদন এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সবশেষ কোভিড-১৯ মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারে নি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক বছরেরও অধিক সময় লেগে যায় সেতুর কাজ সম্পন্ন হতে।
সেতুটির প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতুর আদলেই নির্মাণ করা হয়েছে ফোর লেন বিশিষ্ট লেবুখালীর পায়রা সেতু। পায়রা নদীর মূল অংশের ৬৩০ মিটার ‘বক্স গার্ডার’ চারটি স্প্যানের উপর নির্মিত হয়েছে, যার মূল অংশ ২০০ মিটার করে দু’টি স্প্যান ১৮.৩০ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স রাখা হয়েছে পায়রা সমুদ্রবন্দরে উপকূলীয় পণ্য ও জ¦ালানিবাহী নৌযান চলাচলের জন্য।
তিনি আরও বলেন, মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ ১০টি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের উপর নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট রয়েছে সেতুতে। যার ফলে দূর থেকে সেতুটিকে মনে হবে ঝুলে আছে। এ ছাড়া পায়রা নদীতে জোয়ারের সময় নদী থেকে সেতু ১৮.৩০ মিটার উঁচু থাকবে। এতে নদীতে বড় বড় জাহাজ চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি।প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, খর¯্রােতা পায়রা নদীর ভাঙন থেকে লেবুখালী সেতু রক্ষায় পটুয়াখালী প্রান্তে এক হাজার ৪৭৫ মিটার নদী শাসন কাজ চলছে। সেতুর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বরিশাল প্রান্তেও নদী শাসনের প্রয়োজন। প্রকল্পের আওতায় বরিশালে একটি প্রশাসনিক ভবনও নির্মাণ করা হচ্ছে। সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে পায়রা সেতু। এদিকে সেতুর টোল আদায়ের জন্য পটুয়াখালী প্রান্তে নির্মিত হচ্ছে টোল প্লাজা। ডিজিটাল পদ্ধতিতে এ সেতুতে টোল আদায় করা হবে।
দুমকি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কেএম আনোয়ারুজ্জামান চুন্নু জানান, আমাদের স্বপ্নের সেতু এটি। লক্ষাধিক মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে এই সেতুকে ঘিরে। সেতুটি উন্মুক্ত করা হলে পদ্মার এ পারের ১১ জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ সহজ হবে। পদ্মা সেতু খুলে দিলে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে। সেতুটি নির্মাণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, আর পাঁচ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে, তাও দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। আগামী মাসের মধ্যে সেতুর সব কাজ শেষ করে খুলে দেয়া সম্ভব হবে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের এই সেতু।