আশাশুনি উপজেলার শ্বেতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমিতা চৌধরিীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের ও তদন্ত হলেও তার আচরণে পরিবর্তন দেখা যায়নি। অপরাধ ঢাকতে দীর্ঘ ৬ মাস পর উল্টো অভিযোগ আনার ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
বুধহাটা ইউনিয়নের ২৩নং শ্বেতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমিতা চৌধুরী বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে স্কুল পরিচালনা কমিটি, অভিভাবক, শিক্ষকদের সাথে নানা অসৌজন্যতা, অভদ্রতা সৃষ্টির পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে স্কুলের সার্বিক পরিবেশকে বিষিয়ে তুলেছেন। স্কুলের পরিবেশ ও উন্নয়ন কার্যক্রম ভেস্তে যেতে বসেছে। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আহসান হাবিব তার বিরুদ্ধে ১১ দফা অভিযোগ এনে প্রতিকার প্রার্থনা করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের মধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তির সময় ৫০ টাকা করে আদায়, কমিটির সদস্যরা বাদ সাধলেও নানা অজুহাতে অমান্য করে টাকা আদায় করা, সরকারি অর্থ আয় ও ব্যয়ে গোপনীয়তার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করা, কমিটির সাথে কোন আলোচনা ছাড়াই নিজের খেয়াল খুশিমত সরকারি অর্থ উত্তোলন ও ব্যয় করা, কথায় কথায় মিথ্যা বলা, অভিযোগ করা ও অফিস-অফিসারের দোহাই দেয়া, স্বেচ্ছাচারিতা, কমিটির মতামত ও আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, কমিটি ও অভিভাবকদের অবমূল্যায়ন ও দুর্ব্যবহার করা, রং করা বাবদ সরকারি অর্থের ১০% কমিশন গোপনে গ্রহণ করা, সহকারী শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার করা, নিজে স্বাক্ষর না করে পিয়নকে দিয়ে নোটিশে স্বাক্ষর করিয়ে নোটিশ জারী করা, ঢাকার দোকানের ভুঞা ভাউচার দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ সহ নানা অভিযোগের কারণে অভিভাবক ও গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অভিযোগ পেয়ে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সেলিম স্কুলে গমন করে অভিযোগকারী পক্ষ ও প্রধান শিক্ষককে নিয়ে বসেন। এ সময় ইউপি সদস্য লিয়াকত আলি, সদস্য আক্তারুল, শিক্ষক ও কমিটির সদস্যবৃন্দ অভিযোগের পক্ষে প্রমান উপস্থাপন করেন। তারা অনিয়ম প্রমানের সাথে সাথে স্কুলের রেজাল্ট তুলে ধরে তাকে অবিলম্বে অন্যত্র বদলী ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করেন। একপর্যায়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ভুলগুলো ক্ষমা করে আগামীতে একসাথে ভালভাবে কাজ করার সুযোগ দানের অনুরোধ জানান। কিন্তু কেউ তাকে ক্ষমা করতে সম্মত না হয়ে বদলীর দাবী করেন। তদন্তের পর সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সেলিম বলেন, ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসাবে অভিযোগ নিয়ে দুপক্ষের সাথে বসেছিলাম। প্রধান শিক্ষক ভুল স্বীকার করেছেন। মীমাংসা সম্ভব না হওয়ায় অফিসিয়াল ভাবে তদন্ত ও পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
এঘটনার পর ৪ মাস অতিবাহিত হলেও প্রধান শিক্ষকের আচরণের কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং ঘটনার ৪ মাস পরে এসে নিজের অপরাধকে ধামাচাপা দিতে উল্টো স্কুলের সভাপতির বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ অভিযোগ এনে থানায় জিডি ও পত্রিকায় রিপোর্ট করেছেন। এনিয়ে এলাকাবাসী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা প্রধান শিক্ষক কর্তৃক আনীত অভিযোগ ও পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধনে প্রধান শিক্ষককে বহিস্কার ও অন্যত্র বদলীর জোরালো দাবী জানিয়েছেন।
এব্যাপারে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সেলিম বলেন, সভাপতি কর্তৃক দায়েরকৃত অভিযোগের অফিসিয়াল তদন্ত আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। তদন্ত শেষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
প্রধান শিক্ষক সুমিতা চৌধুরীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।