করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার পর আগামী ১২ সেপ্টেস্বর থেকে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর ঘোষণা করেছে সরকার। ঘোষণা আসার পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জোরেশোরে চলছে ধোয়া-মোছার কাজ। আর এতে রাজশাহীর তানোর পৌরসভা উচ্চবিদ্যালয়ের অভিভাবক ও শিক্ষকসহ সাড়ে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীর মাঝে আনন্দের বদলে দেখা দিয়েছে হতাশা।
তারা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ক্লাস করতে পারবে কিনা সে নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। তবে, আগামীকাল ১২ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় যথাসময়ে খোলার জন্য ক্লাসরুম তৈরির প্রচেষ্টা করছে এমনটিই দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের।
জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের দিকে তানোর পৌরসভা উচ্চবিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ওই সময় স্থানীয়দের সহায়তায় বেশ কয়েক কক্ষ বিশিষ্ট মাটির স্কুল তৈরি করা হয়। পরে শিক্ষকদের ডোনেশনের টাকায় পাঁকা ওয়াল টিনসেট বিশিষ্ট ৩ কক্ষ বিশিষ্ট বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়। সম্প্রতি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর অধীনে নতুন ভবণ বরাদ্দ হয়। কিন্তু স্কুল সংশ্লিষ্টরা নতুন শ্রেণি কক্ষ তৈরি না করে পুরনো পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার হওয়া মাটির ঘর ভেঙে ফেলে। পরে গত বছরের মার্চ মাসে চারতলা ভিতবিশিষ্ট একতলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ অবস্থায় নতুন ভবণ নির্মাণ কাজের অজুহাতে আর করোনা’র গন্ধে স্কুলটিতে সব ধরণের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
আজ (১১ সেপ্টেম্বর) শনিবার সকালে তানোর পৌরসভা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন একতলা অ্যাকাডেমিক ভবন কাজের জন্য ইট, বালু, সিমেন্ট, রড, মাটির স্তূপ, কাঠের ব্যবহৃত লোহার পেরেকসহ ইত্যাদি স্কুলমাঠে রাখা আছে। এ ছাড়া মাঠের অপর প্রান্তে নির্মাণ শ্রমিকদের ঘর নির্মাণ করা আছে। এ সময় বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, অনেক দিন পর স্কুল খুলে দেওয়ার কথা শুনে আনন্দিত হলেও এখন পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষ তৈরি না হওয়ায় তারা শঙ্কিত।
বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা ক্লাস করাতে চাইলেও শ্রেণিকক্ষ না থাকায় ক্লাস করাতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে, নতুন শ্রেণিকক্ষ তৈরি করার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে সকাল থেকে কাজ শুরু করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমনটি দাবি তাদের।
এবিষয়ে তানোর পৌরসভা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম মন্টু জানান, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী বিদ্যালয় যথাসময়ে খোলা রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করাতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
তানোর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শুধু পৌরসভা উচ্চবিদ্যালয় নয়, পুরো উপজেলার সব স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা প্রধানদের চিঠির মাধ্যমে সরকারি নির্দেশেনা মেনে পাঠদানের জন্য বলা হয়েছে। এর অন্যথায় সংশ্লিষ্ট প্রধানদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মিটিংয়ে আছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। পরে কথা হবে বলে জানান ইউএনও।
এব্যাপারে তানোর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না জানান, তানোর পৌরসভা উচ্চ বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকার বিষয়টি তার জানা নেই। তবে, অতিদ্রুত প্রয়োজনমতো ক্লাসরুম তৈরি করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।