লাউয়াছড়া বনে রেল ও সড়ক দূর্ঘটনায় বন্যপ্রাণীদের মৃত্যু প্রতিরোধে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি স্থানে ‘বনসেত’ু স্থাপন করা হয়েছে। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় পার্কে মহাবিপন্ন উল্লুকসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের অবাধ চলাচলের সুবিধার্থে এই পাঁচটি বনসেতু স্থাপন করা হয়।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্র জানায়, লাউয়াছড়া জাতীয় পার্কের অভ্যন্তর দিয়ে প্রবাহমান রেলপথ ও সড়কপথ বনকে বিভক্ত করে ফেলায় বন্যপ্রাণীদের সড়ক ও রেলপথ অতিক্রমের সুবিধার্থে রেল ও সড়কপথের ওপর বনসেতু স্থাপন করে দুই পাশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে এই সেতু। সড়ক ও রেলের দুই পাশে উঁচু দুটি গাছের সঙ্গে নাইলনের মোটা রশি বেঁধে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কার্যালয়ে সহকারি বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার মিত্র জানান, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক হাবিবুন নাহার এর নেতৃত্বে ৬ জনের গবেষক দল এই বনসেতু স্থাপনের কাজ করেন। স্থানীয়ভাবে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, সহকারি বন সংরক্ষক, ওয়াইল্ডলাইফ রেঞ্জার ও বিট কর্মকর্তা গবেষক দলকে সহযোগিতা করেন। তিনি জানান এই বনসেতু বেয়ে উল্লুকসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী রেল ও সড়কপথের দুই পাশের বনে চলাচল করতে পারে। তিনি আরও জানান, লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কপথ ও সিলেট-ঢাকা রেলপথ প্রবাহমান। ফলে চিরসবুজ এ বনাঞ্চল বিভক্ত হয়ে আছে। এ কারণে বন্যপ্রাণীগুলো একগাছ থেকে আরেক গাছে লাফ দিয়ে যেতে পারেনা। কিছু কিছু বন্যপ্রানী গাছ থেকে নেমে সড়ক ও রেলপথ অতিক্রম করে। এভাবে রেল ও সড়কপথ অতিক্রম করতে গিয়ে দূর্ঘটনায় অনেক বন্যপ্রাণী মারা যায়। তাই এ বনের দুই পাশে উল্লুকসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী চলাচলের সুবিধার্থে মোট পাঁচটি বনসেতু স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রেলপথে চারটি এবং সড়কপথে একটি বনসেতু স্থাপন করা হয়েছে। বন্যপ্রাণীদের চলাচল ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য বনসেতুগুলোর কাছে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এই ক্যামেরার মাধ্যমে বন্যপ্রাণী চলাচলের বিষয়টি জানা যাবে।
শ্রীমঙ্গলের ওয়াইল্ডলাইফ রেঞ্জার মো: শহিদুল ইসলাম জানান, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বনাঞ্চলে এমন বনসেতু রয়েছে। তিনি বলেন, বনসেতু বেয়ে চলাচলে অভ্যস্থ হতে বন্যপ্রাণীদের কিছুদিন সময় লাগবে। প্রতিটি সেতুর দৈর্ঘ্য ২২ থেকে ২৫ মিটার। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী লাউয়াছড়ায় ১৩টি পরিবারে ৪০-৪১টি উল্লুক রয়েছে বলে জানান তিনি। পৃথিবীর যে চারটি দেশে উল্লুক দেখা যায় তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম এবং লাউয়াছড়া উল্লুকের একক আবাসস্থল।