বরগুনার পাথরঘাটায় বন বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই চলছে অবৈধ করাতকল। গোট উপজেলায় মোট ৯৩টি করাতকলের মধ্যে ৬১টি অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এসব করাতকলে উজাড় হচ্ছে বঞ্চলের গাছ, অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় যথাযথ প্রক্রিয়ায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত করাতকলের সংখ্যা মাত্র ৩২টি। লাইসেন্সবিহীন পরিচালিত ৬১টি। বন বিভাগের আইনে বনাঞ্চলের ১০কিলোমিটার এলাকার মধ্যে করাতকল স্থাপন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও অবাধে চলছে এসব করাতকল।
সংরক্ষিত সামাজিক বনায়নের ভেতর, বনঘেঁষে এমনকি বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের নিকটে স্থাপন করা হয়েছে অবৈধ করাতকল। ওইসব অবৈধকলে কাঠ চোর ও অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ীরা কাঠ কেটে উজার করছে বনের কাঠ। ফলে ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি, হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রানী।
বৈধ করাতকল মালিকদের অভিযোগ, পাথরঘাটায় বৈধভাবে (লাইসেন্সকৃত) ৩২টি করাতকল থাকলেও অবৈধ করাতকলগুলো হরদম চলার কারণে তাদের কলগুলো ভালোভাবে চলছে না। তারা আরও জানায়, বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপনের সরকারি বিধান না থাকলেও স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে স্থানীয় লোকজন বনাঞ্চলে গড়ে তুলেছেন ওইসব অবৈধ করাতকল।
সরেজমিন ও স্থানীয়দের অভিযোগ, রেঞ্জ অফিস ও বিট অফিসের নাকের ডগায় মালিকরা করাতকল স্থাপন করে দিনরাত চোরাই কাঠ প্রসেস করছে। সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তা, বিট কর্মকর্তা ও ফরেস্ট গার্ডদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দিনের পর দিন এসব করাতকল চালু রয়েছে। এসব করাতকল ও অতিরিক্ত গাছ চুরির কারণে প্রতি বছর সরকারের কোটি কোটি টাকার বাগান ধংস হয়ে যাচ্ছে। করাতকলের বিরুদ্ধে কোন অভিযান না থাকায় অনুমোদনহীন এসব অবৈধ করাতকলের মাধ্যমে বেপরোয়াভাবে চলছে বৃক্ষ নিধন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, অধিকাংশ করাতকল গুলো গড়ে উঠেছে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক সংলগ্ন। একাধিক করাত কল মালিক জানান, ট্রলারের কাঠ কাটার সূত্র ধরেই করাতকলের ব্যবসা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স করা হয়। কোনো সময় ওপর থেকে কেউ এলে তাদেরকে ম্যানেজ করা হয়।
পাথরঘাটা উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটির সভাপতি ফাতিমা পারভীন বলেন, অবৈধ করাতকল বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উপজেলা পরিষদের মাসিক মিটিং চলাকালে এ বিষয় আলোচনা করে সতর্ক করে অবৈধ করাতকল মালিকদের নোটিশ পাঠানো হবে।
পাথরঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল হক বলেন, যারা অবৈধভাবে করাতকল চালাচ্ছে তাদের নোটিশ দেয়া হবে। আইন না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে করাতকল স্থাপনের সঙ্গে আমি কিংবা আমার বিট অফিসারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মুহাম্মাদ আল-মুজাহিদ বলেন, বন বিভাগকে সাথে নিয়ে অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে খুব শিঘ্রই মোবাইল কোর্টে মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
সামাজিক বন বিভাগ পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, অবৈধ করাতকল মালিকদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাদেরকে স্থানীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে চলতি মাসেই নোটিশ দেয়া হবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আইন না মানলে খুব শিঘ্রই অবৈধ করাতকল গুলো মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান করে উচ্ছেদ করা হবে।