সরকার দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সৌরবিদ্যুতের অবদান বাড়াতে চাচ্ছে। ওই লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আর দেশের উত্তরাঞ্চলকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধানতম কেন্দ্রস্থল হিসেবে ভাবা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তা নিয়ে নতুন এক রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং তা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। নতুন রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ সৌরশক্তি ব্যবহার করে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা করা হয়েছে। তার মধ্যে সরকারের পরিকল্পিত সোলার হাবগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার মেগাওয়াট। সেজন্য প্রস্তাবিত রোডম্যাপে ১৩টি জেলাকে সোলার হাব হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। ওই জেলাগুলোর চরাঞ্চলে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে এক দশক আগে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান-২০১০ প্রণয়ন করে সরকার। তারপর ২০১৬ সালে আরো একটি মহাপরিকল্পনা করা হয়। ওই পরিকল্পনায় মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের কথা বলা হয়। কিন্তু তা ৩ শতাংশের বেশি করা যায়নি। এখন সোলার হাবের বাইরে অন্য আরো কিছু মাধ্যম থেকে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তার মধ্যে সোলার ফটোভলটাইক (পিভি) থেকে ২ হাজার মেগাওয়াট, বেসরকারিভাবে স্থাপিত সোলার প্যানেল থেকে ২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, রুফটপ সোলার থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াট, সোলার পাম্প থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, সোলার চার্জিং স্টেশন থেকে ২২৬ মেগাওয়াট, সোলার টেলিকম টাওয়ার ও সোলার স্ট্রিট লাইট থেকে ৮৫ মেগাওয়াট, সোলার হোম সিস্টেম থেকে ২৬০ মেগাওয়াট, সোলার মিনি গ্রিড থেকে ১৬ ও অন্যান্য উৎস থেকে আরো ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সৌরশক্তি থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ হাজার ৭৪৩ মেগাওয়াট ও পরের এক দশকে অর্থাৎ ২০৩১-৪১ সালের মধ্যে আরো ১৯ হাজার ৭১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোয় স্থাপিত সোলার হাব থেকে ৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে উত্তরাঞ্চলের ৬টি জেলায় সোলার হাবগুলো গড়ে তোলা হচ্ছে। তার মধ্যে পাবনা জেলায় ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, গাইবান্ধায় ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট, সিরাজগঞ্জে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, রংপুর ও নিলফামারীতে ৬০০ মেগাওয়াট ও কুড়িগ্রামে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য হাতে নেয়া হয়েছে। তার বাইরে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই, জামালপুর, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ ও পটুয়াখালী জেলায় বাকি ৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
এদিকে খাতসংশ্লিষ্টদের অনেকেই সোলার নিয়ে সরকারের এমন পরিকল্পনা অসম্ভব বলে মনে করছে। তাদের মতে, দেশে ৩০ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার যে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে তা অযৌক্তিক। কারণ দেশের কোথাও সেজন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত জমি নেই। তাছাড়া সরকারি প্রণোদনা ও বরাদ্দ না থাকলে ওই খাতে বিনিয়োগ অযৌক্তিক। আর বিনিয়োগ ও কারিগরি দক্ষতা না থাকার কারণে গত ১০ বছরে দেশে সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনাগুলোকেও কাজে লাগানো যায়নি। যদিও প্রতিবেশী দেশ ভারত ইতিমধ্যে সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিক থেকে নিজস্ব অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। ওই দেশটি এখন সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বৈশ্বিক পর্যায়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। সৌরশক্তি থেকেই ওই দেশের মোট নবায়নযোগ্য জ্বালানির সক্ষমতার মধ্যে ৫০ গিগাওয়াটই আসছে। অথচ বাংলাদেশে গত এক দশকে সৌরবিদ্যুৎ খাতের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। বর্তমানে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বেড়ে ৭৬৬ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। তার মধ্যে সৌরশক্তি থেকে ৫৩২ মেগাওয়াট, পানি থেকে ২৩০ মেগাওয়াট, বাতাস থেকে ২ দশমিক ৯ মেগাওয়াট ও বায়োগ্যাস থেকে দশমিক ৬৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন জানান, পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে একটি রোডম্যাপ করা হয়েছে। সৌর থেকে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে তা এতোদিন জানা ছিল না। তবে এখন একটি প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। সেটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পেলে সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে কাজ শুরু হবে।