সরাইলে বিদ্যুৎ এখন সোনার হরিণ। কখন চলে যায় সেটা নিয়ে আর ভাবছে না কেউ। কখন বিদ্যুৎ আসবে সেই দিকেই দৃষ্টি সবার। টানা বিদ্যুৎহীনতা সরাইলে এখন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। ফলে ভাদ্র আশ্বিন মাসের প্রচন্ড তাপদাহে যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সরাইলের ১৮ হাজার গ্রাহক। কোন কারণ ছাড়া যখন তখন চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। আর একটু বৃষ্টি বা বাতাস হলে তো কেয়ামত। থান্ডারিং, ৩৩ কেভি লাইনে সমস্যার অজুহাতে বিদ্যুৎ থাকে না ২০-৩০ ঘন্টা। কারণ ছাড়া দিনে রাতে ৬-৭ বার বিদ্যুৎ চলে যাওয়াটা সাম্প্রতিক সময়ে নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। গত শুক্রবার দিবাগত সমগ্র রাতে সরাইলে ছিল না বিদ্যুৎ। ঘুমোতে পারেননি কেউ। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার মিলে টানা ২৭ ঘন্টা শাহবাজপুর ও শাহজাদাপুর ছিল অন্ধকারে। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের ক্ষোভ তুলে ধরেন। অথচ এখানে প্রধানমন্ত্রীর ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার ‘উন্নয়ন প্রকল্প’ এর কাজ চলমান রয়েছে। কর্তৃপক্ষের বিরূদ্ধে রয়েছে ফোন রিসিভ না করার অভিযোগ। তবে এসব দূরাবস্থার জন্য অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন অনেকেই। সরজমিনে গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও সরাইলের চিত্র ভিন্ন ধরণের। সরাইল পিডিবি’র কর্মকর্তা কর্মচারীরা দূর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের আখের ঘুচাতেই ব্যস্ত। ওই দফতরের অনিয়ম দূর্নীতির চিত্র তুলে ধরে ভিডিও বক্তব্য দিচ্ছেন সেখানকার কর্মচারীরা। বাণিজ্য ঠিকিয়ে রাখতে দফতরটিতে চাঙ্গা হচ্ছে লবিং গ্রƒপিং দ্বন্ধ। এখানে চলছে প্রধানমন্ত্রীর ‘উন্নয়ন প্রকল্প’ এর কাজ। মূল পরিকল্পনার ধারে কাছেও নেই তারা। যেখানে টাকা সেখানে কাজ। এই নীতিতেই চলছে প্রকল্পের কাজ। আর এ জন্যই ঝরাজীর্ণ খুঁটি ও ক্যাবল পরিবর্তন হচ্ছে না। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নামে এখানে চলছে হরিলুট। আর এ হরিলুটে রয়েছেন স্থানীয় পিডিবি’র কর্মকর্তারা ও ঠিকাদারের লোকজন। বিদ্যুতের দূর্ভোগে এটিও একটি অন্যতম কারণ। সরাইল পিডিবি’র অনিয়ম দূর্নীতির উপর অর্ধডজনেরও অধিক প্রতিবেদন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তদন্তও হয়েছে। খোঁজ নিয়েছেন দুদকও। কিন্তু সর্ষের মধ্যেই ভূত! তাই দিন দিন ভেস্তে যাচ্ছে গ্রাহক সুবিধা। প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের নাম ভাঙ্গিয়ে দালালিতে ব্যস্ত আছেন কতিপয় ব্যক্তি। এ তালিকায় রয়েছে কতিপয় কথিত সাংবাদিকের নামও। ফলে গত ২-৩ বছর ধরে সরাইলের গ্রাহকদের কষ্ট ও দূর্ভোগ বেড়েই চলেছে। মিটার বদল, নতুন সংযোগ, প্রিপ্রেইড মিটারের লক খোলা ও টাকা রিফিল করার ক্ষেত্রেও নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে গ্রাহকরা। এরপর রয়েছে কৌশলে গ্রাহকদের শোষণের খেলা। এতকিছুর পরও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পাচ্ছে না তারা। দিনে রাতে যখন তখন চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। আকাশে মেঘ জমলে বা হালকা বাতাস হলেই গায়েব হয়ে যায় এখানকার বিদ্যুৎ। একাধারে ২০-২২ ঘন্টা কখনো তার চেয়েও অধিক সময় বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে ১৮ হাজার গ্রাহক রোগী ও শিশুদের নিয়ে চরম দূর্ভোগে পড়ে যায়। প্রচন্ড তাপদাহে রাত কাটে নির্ঘুম। নষ্ট ও বিকল হয়ে যাচ্ছে মানুষের ফ্রিজ, এসি, টেলিভিশন, বৈদ্যুতিক পাখা, কম্পিউটার ও বাল্ব। কারণ জানতে কর্তৃপক্ষের মুঠোফোনে দিলে রিসিভ না করা ও উত্তেজিত হয়ে পড়ার অভিযোগও করেছেন অনেক গ্রাহক। অনেক সময় নির্বাহী কর্মকর্তার ফোনও ওঁদের মুঠোফোনে প্রবেশ করানো যায় না। শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যার রাজিব আহমেদ রাজ্জি ও শাহজাদাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, কোন ধরণের মাইকিং বা নোটিশ ছাড়াই গত বুধবার রাব ৮টায় হঠাৎ চলে যায় বিদ্যুৎ। ফিরে আসে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায়। টানা দীর্ঘ ২৭ ঘন্টা অন্ধকারে ছিলেন ২ ইউনিয়নের গ্রাহকরা। সীমাহীন কষ্ট ও দূর্ভোগে মানুষ রাস্তায় এসে চিৎকার করে। অনেকে কান্নাকাটিও করেছেন। অগণিতবার ফোন দিয়েও কারণ জানতে পারিনি। এক্সেন সাহেব ফোন রিসিভ করেননি। লোকজন ক্ষুদ্ধ হয়ে মহাসড়কে আসতে চেয়েছে। সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানের মান এমন হতে পারে না। সরাইল সদর, কালিকচ্ছ, নোয়াগাঁও ও চুন্টা ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় চলে যায়। আসে সন্ধ্যা ৬টায়। আবার রাত ৭টায় গিয়ে আসে ১১টায়। এসব কারণে স্থানীয় পিডিবি’র উপর ক্রমেই ক্ষুদ্ধ হচ্ছেন গ্রাহকরা। মাঝেমধ্যে ফোলে পেঁপেও ওঠছে তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিডিবি অফিসের এক কর্মচারী বলেন, কি আর বলব। ঠেলাঠেলি ঘর, খোদা রক্ষা কর। এখানে দায়িত্ব নিয়ে কেউ কাজ করতে চায় না। ব্যবসায়ি মো. আলাল উদ্দিন জুরূ বলেন, গত ২-৩ বছর ধরে সরাইল পিডিবি’র সেবার মান খুবই খারাপ। এ দফতরের লাইনম্যান ও টেকনিশিয়ানরা অদক্ষ অযোগ্য অলস। কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এরা সর্বক্ষণ ধান্ধায় ব্যস্ত থাকে। মানুষের দূর্ভোগে এরা ফায়দা লুটে। বিদ্যুৎ চলে গেলে অথবা লাইনে সমস্যা হলে এরা নড়ে না। কর্তৃপক্ষ আরাম আয়েশে জেলা শহরে এসসিতে ঘুমায়। সরাইল পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) এ জেড এম আনোয়ারূজ্জামান বৃহস্পতিবার রাতে ফোন রিসিভ না করলেও শুক্রবার মুঠোফোনে জানান, ৩৩ কেভি লাইনে বড় ধরণের সমস্যা হয়েছিল। সেখানে দীর্ঘ সময় কাজ করতে হয়েছে। তাই গ্রাহকদের কিছুটা দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।