পৃথিবী থেকে করোনা কখন বিদায় হবে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে প্রথমেই বুঝতে হবে পৃথিবীতে করোনা আসল কেমন করে? প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল চীনের উহান প্রদেশের কোন এক ল্যাব থেকে এই মরণ ঘাতি ভাইরাসটি ছড়িয়েছিল। সেটা কি নিছক দুর্ঘটনা নাকি অন্যকিছু সে বিষয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। পরবর্তীতে অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের ধারণা পরিবেশ ধ্বংসের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে করনা ভাইরাসের উৎপত্তিও বিকাশ। কোন কোন বিজ্ঞানীদের ধারণা চীনের পশু পাখির মার্কেট থেকে কোন প্রাণী হতে প্রথমে মানুষের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়ায়। যুগযুগ ধরে পৃথিবীতে বহু মহামারী এসেছে। বহু মানুষের মৃত্যু ঘটিয়ে আবার বিদায় হয়েছে। বিভিন্ন মহামারী আসার পিছনে ভিন্নভিন্ন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু বিদায় করার ব্যাপারে টিকা যে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। পৃথিবী থেকে প্লেগ, গুটি বসন্তের বিদায়তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে।
পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত আদ্, সামুদ, নুহজাতির ধ্বংসের কথা আমরা জানি। উল্লেখিত জাতি গুলো যখন এক সত্য উপাস্য আল্লাহকে ভুলে গিয়ে শিরকে লিপ্ত হয়, বিভিন্ন পাপা চারের ডুবে যায়, তখন মহান আল্লাহ তাদের কেসৎ পথে ফিরিয়ে আনার জন্য যুগে যুগে বিভিন্ন নবী-রাসূল প্রেরণ করেন। কিন্তু অবশেষ জাতি গুলোর চরম অবাধ্যতার কারণে আল্লাহর তরফ থেকে আযাব এসে জাতি গুলোকে ধ্বংস করে দেয়। সেখানে নতুন জাতি সৃষ্টি হয়।
মানুষ যখন আল্লাহকে ভুলে গিয়ে বিভিন্ন পাপা চারে লিপ্ত হতে থাকে তখন তাদেরকে হুঁশিয়ার করার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে আজাব গজব আসা বিচিত্র কিছু নয়। আমাদের শেষ নবীর দোয়ার বরকতে উম্মতে মোহাম্মাদীর কোন জাতি আর আগের মত আমুলে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা নয়।
গত দ্বিতীয় মহা যুদ্ধের সময় আমেরিকা যখন জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসিকায় পারমাণবিক বোমা হামলা করেত প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ তৎক্ষণাৎ প্রাণ হারায়। জাপান আত্মসমর্পণ করায় বোমা ফেলা বন্ধ হয় এবং বিশ্বযুদ্ধের করুণ পরিসমাপ্তি হয়।
আমরা কি ভাবতে পারিনা এই করোনা মহামারী টাও মানুষের পাপের ফলে আল্লাহর তরফ থেকে আমাদেরকে সাবধান করার জন্য এক ধরনের আজাব? তাহলে আমরা কি আসলেই সাবধান হয়েছি? এই করোনা মহামারীর সময়ও বহু দুর্নীতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি চিকিৎসা সামগ্রী,জীবন রক্ষাকারী ঔষধের কেনাকাটা নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। প্রতিদিন পত্রপত্রিকায় ধর্ষণ এর খবর বের হচ্ছে।হত্যা রাহাজানি নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা কি আমাদের কৃতকর্মের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছি যে তিনি আমাদের উপর থেকে তার গজব উঠিয়ে নিবেন?
করোনা মোকাবেলায় যে সব বিধিনিষেধ গুলো মানার কথা সে গুলো কি আমরা ঠিক মত মানছি ? সরকারি আদেশ ( যদিনা সেটা কুফরি আদেশ হয়) মানা একজন মুমিনের কর্তব্য । আমরা মসজিদে নামাজ পড়তে যাই কিন্তু অধিকাংশই মাস্ক পরেন না। সঠিক ভাবে হাত ধোয়ার, সঠিক দূরত্ব মেনে লাইনে দাঁড়ানোর বালাই নাই। এ বেপারে মুসুল্লিদের উৎসাহিত করতে অনেক জায়গায় অনিহা দেখা যায়। বুখারী শরিফের একটি হাদিস থেকে জানা যায় হজরত ওমর (রাঃ) তার খেলাফতের সময় একবার মদিনা থেকে সিরিয়ার উদ্দেশ যাত্রা করে ছিলেন, পথিমধ্যেæসারাগ” নামক এক জায়গায় পৌঁছালে তাকে অবহিত করা হয় যে সিরিয়া এলাকায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে । তখন সেখানে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে উপস্থিত সাহাবাদের মধ্যে মত বিরোধ দেখা দেয়। এমন সময় একজন প্রবীণ সাহাবা উপস্থিত হয়ে জানান যে নবী করিম (সাঃ) বলেছেন æযখন তোমরা কোন এলাকায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব এর সংবাদ শুনো, তখন সে এলাকায় প্রবেশ করবেনা। আর তোমরা যেখানে অবস্থান করত থায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেওনা”। এই হাদিস শুনে হজরত ওমর (রাঃ) আল্লাহ্র প্রশংসা করেন এবং অতঃপর মদিনায় ফিরে যান।
তাহলে দেখুন এই করোনা মহামারীর সময় আমরা কিতার প্রতিরোধের ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত যে সব বিধি নিষেধ সরকার জারি করেছে সেগুলা ঠিকমত মানছি, আমরা কি কোরআন হাদিস মানছি? আমরা কি আল্লাহর কাছে কায়মন বাক্যে আমাদের কৃত্কর্মের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি? সব স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলে, টিকা নিয়ে ফলাফল এর জন্য আল্লাহ এর উপর তাওয়াককুল করছি? যদি এসব কিছু ঠিক মতো করি নিশ্চয়ই করোনা বিদায় হবে। আর যদি না করি তবে আল্লাহই ভালো জানেন।