কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের কুড়াখাল গ্রামে সুন্নত নামাজরত অবস্থায় মসজিদে খুন হওয়া আবু হানিফ খানের (৪৩) বাড়িতে গেলেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এমপি। শনিবার বিকেলে তার বাড়িতে গেলে নিহতের মেয়ে লামইয়া (১২) কান্নাজড়িত কন্ঠে এমপিকে বলেন, ‘কোন আর্থিক সহযোগিতা চাই না, নিরপরাধ বাবা হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’ এ সময় এমপি পরিবারের অন্য সদস্যদের শান্তনা দিয়ে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশ^াস দেন।
এলাকায় এমপি এসেছে এমন সংবাদে অনেক লোক জড়ো হয়ে তাদের আবেগ এমপি’র কাছে প্রকাশ করেন। কুড়াখাল সৈয়দ দায়েম উল্লাহ শিশু সদন হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা মাঠে জড়ো হওয়া লোকজনের উদ্দেশ্যে কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, এ বর্বর হামলাকারীরা প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটিয়ে ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে। ঘটনাটি লুকানোর কোন সুযোগ নেই। যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করবেন। আর যাতে কোন রকম অপ্রিতিকর ঘটনা না ঘটে সে দিকে খেয়াল রাখবেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ তমাল, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সরকার, ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আবুল খায়ের, নজরুল ইসলাম, জাকির হোসাইন সরকার ও রুহুল আমিন প্রমুখ।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সমাজে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওই দু’গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। গত শুক্রবার জুমার দিন সহ-সভাপতি হাবিব খানের গ্রুপের কেউ যদি কোন বিষয় নিয়ে কথা বলে তবেই হামলা শুরু হবে। এমন পরিকল্পনা আগে থেকেই নিয়ে রেখেছিল সভাপতি আবদুল মালেক গ্রুপ। তাই তারা আগে থেকেই মসজিদের মিম্বরের নীচে ও হুজুরাখানায় ধারালো অস্ত্র ও লোহার পাইপ এনে রাখেন। খুৎবা পড়ার আগ মুহুর্তে ইমাম আযান দিতে বললে মুয়াজ্জিন মসজিদের দরজায় যাওয়া মাত্রই সহ-সভাপতি হাবিব খান বলে ওঠেন যে, গত ২৫ বছর ধরে মসজিদের ভিতরে মিম্বরের সামনে আযান দেয়া হতো, আজ কেন দরজায়? এ কথা বলতেই, সভাপতি আবদুল মালেক গ্রুপ আচমকা হামলা চালায়। আতঙ্কে ছুটাছুটি করে বেরিয়ে আসতে গিয়ে সাধারণ মুসল্লি কম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সৈয়দ দায়েম উল্লাহ শিশু সদন হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার বেশ কয়েকজন ছাত্র ও দুইজন শিক্ষক আহত হয়। তাছাড়া সহ-সভাপতি হাবিব খান গ্রুপের গুরতর আহত ইমন খান (২৫) ও আবুল খায়ের (৪০) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন আছেন। নিহত আবু হানিফ খানের লাশ কুমেক হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বিকেলে ওই মাদরাসা মাঠে জানাযার পর স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, মসজিদে হামলার ঘটনায় একজন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনার প্রধান পরিকল্পনাকারী শাহীন ভুইয়াকে (৩৫) আটক করে জেল-হাজতে প্রেরণ করেছি। নিহতের স্ত্রী আফরোজা বেগম (৩২) বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন আছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, কুড়াখাল বাইতুন নূর কেন্দ্রিয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ চলাকালে গত শুক্রবার খুৎবার পূর্বে আযান (সানি) দেয়াকে কেন্দ্র করে মসজিদের সহ-সভাপতি হাবিব খান গ্রুপের উপর সভাপতি আবদুল মালেক গ্রুপ মসজিদের ভিতরে হামলা চালায়। হামলায় সুন্নত নামাজরত অবস্থায় একাধিক ছুরির আঘাতে মারা যায় মুসল্লি আবু হানিফ খান (৪৩)।