রংপুরে মাদক বিরোধী অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত এএসআই পিয়ারুল ইসলাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। শনিবার সকাল ১১টা ১৭ মিনিটে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে। রাত থেকে দিন অবধি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে ছুটে গিয়েছেন। পিয়ারুলের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন তার স্বজনরা। অকুতোভয় সহকর্মীকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ হারাগাছ থানা পুলিশ সদস্যরা। পিয়ারুল কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের বাসিন্দা। তার বাবা আবদুর রহমান মিন্টু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। দুই ভাই, দ্ইু বোনের মধ্যে পিয়ারুল সবার বড়।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর নগরীর হারাগাছ থানাধীন সাহেবগঞ্জ এলাকায় এএসআই পিয়ারুলের নেতৃত্বে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ী পলাশকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়। পলাশ তার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে এএসআই পিয়ারুলের বুকে ও পেটে আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পিয়ারুল অন্য পুলিশ সদস্যদের হাতে পলাশকে তুলে দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা পিয়ারুলকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে অস্ত্রপচার শেষে পিয়ারুলকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থা শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কথা জানিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তারা। পিয়ারুলের দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলের বয়স ৪ বছর ও ছোট ছেলের বয়স ২ বছর। তিনি হারাগাছ এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ বসবাস করতেন।
পিয়ারুলের চাচা স্কুল শিক্ষক রহমত আলী বলেন, পিয়ারুল খুব সাহসী ছেলে ছিল। সব সময় চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতো। গত বছর মাদক বিরোধী অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীসহ পুকুরে পড়ে যায় পিয়ারুল। সেখানে পানির মধ্যে আসামীর সাথে তার ধস্তাধস্তি হয়েছিল। আল্লাহর রহমতে সে যাত্রায় পিয়ারুল বেঁচে যায় এবং ওই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এ ঘটনা শুনে আমরা তাকে এমন ঝুঁকি নিতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু সে কারো কথা শোনেনি। দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে তাকে আজ প্রাণ দিতে হলো। আমরা মাদক ব্যবসায়ীর ফাঁসি চাই।
পিয়ারুলের চাচাতো ভাই রাজু আহমেদ বলেন, বড় সন্তান হওয়ায় পিয়ারুল পরিবারের দায়িত্বভার নিয়েছিল। তার অকালে চলে যাওয়াকে আমরা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছি না।
মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান বলেন, মাদক বিরোধী ওই অভিযানে পিয়ারুল ১৫২ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। আহত পিয়ারুলকে বাঁচানোর জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছি। শনিবার সকালে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পিয়ারুলের মৃত্যুতে গোটা মেট্রো পুলিশ শোকাহত। আইনগত ব্যবস্থাগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পিয়ারুল একজন চৌকস ও সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনায় তার অনেক দক্ষতা ছিল। পিয়ারুল এর আগে মাহিগঞ্জ থানা, গোয়ন্দা বিভাগে (ডিবি) কাজ করেছেন। মাদকের বিরোধী অভিযানে তার আত্মত্যাগ বাংলাদেশ পুলিশ চিরকাল মনে রাখবে।