বেগমগঞ্জের পূর্ব হাজীপুর আনোয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন সড়কপরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। সেই সুপারিশের তিন বছর অতিবাহিত হলো। কিন্তু এখনো বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়নি। ফলে শিক্ষকমন্ডলী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এরপরেও অনেক কষ্টে শিক্ষকরা পাঠদান করছেন। সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে বিদ্যায়টি। এতে এলাকাবাসী এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম হতাশাও বিরাজ করছে। বিদ্যালয়টি ভবিষ্যতে কলেজে রূপান্তরিত করার অনেকগুলো পরিবেশ রয়েছে। শুধু সরকারিভাবে পদক্ষেপ নিলেই বাস্তবায়ন হবে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুরে বিগত ২০০০ সালে ‘পূর্ব হাজীপুর আনোয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়টি’ স্থাপিত হয়। ঢাকার এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জমি এবং নগদ অর্থ দিয়ে তাঁর মায়ের নামের ওপর ওই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০১/০১/২০১৩সালে বিদ্যালয়টি পাঠদানের অনুমতি পায়। এরপর অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি পায় ০১/০১/২০১৬ইং। পরবর্তীতে ০১/০১/২০১৭ইং ৯ম এবং দশম শ্রেণির পাঠদানের অনুমতিও পায় বিদ্যালয়টি। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রয়েছে অন্তত চারশত জন। অভিজ্ঞ শিক্ষক/শিক্ষিকা রয়েছে ১৩জন। এছাড়াও পিয়ন ১জন, দপ্তরী ১জন, নৈশপ্রহরী ১জন ও মালি ১জন কর্মরত আছেন। করোনার শুরুতেই সকল শিক্ষক ৫ হাজার টাকা করে সরকারী উপহারের টাকা পেয়েছিলেন। এরপর মাত্র দুইজন শিক্ষক ৫ হাজার টাকা করে ওই উপহারের টাকা পেয়েছেন। বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র এবং শ্রেণিকক্ষ সংকট রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠও নেই। স্কুলের পূর্বপাশের্^ খেলার মাঠের জন্য অর্ধেক পুকুর ভরাট করা যাচ্ছেনা শুধু অর্থের অভাবে।
উপর্যুক্ত ব্যবসায়ী ছাড়া এলাকার উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যক্তি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করছেন না। প্রত্যেক বছর জিপিএ ফাইভসহ এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাশ করেছে এখানকার শিক্ষার্থীরা। জেএসসি পরীক্ষায়ও ফলাফল একই। কিন্তু বিদ্যালয়ের নানা সমস্যা থাকায় শিক্ষার্থীরা এখন চরম হতাশ। বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকের চাকরির বয়সও শেষ পর্যায়ে। গত ২৫/০২/২০১৮ইং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি ওই বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে লিখিতভাবে এমপিভুক্তির জন্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপির নিকট সুপারিশ করেন। এরআগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমানও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীকে সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতায় পূর্ব হাজীপুর আনোয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়টি আজও এমপিওভুক্ত হয়নি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের দাবি- বিদ্যালয়টি দ্রুত এমপিওভুক্ত করা হোক। তা নাহলে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়বে বিদ্যালয় থেকে। বিদ্যালয়টি ভবিষ্যতে কলেজে রূপান্তরিত করার অনেকগুলো পরিবেশ রয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই। জমি আছে কিন্তু অর্থের অভাবে ভবন করা যাচ্ছেনা।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে এই প্রতিনিধি বিদ্যালয়টি সরজমিন পরিদর্শন করেন। এ সময় শিক্ষকেরা তাদের হতাশার কথা তুলে ধরেন। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন সামছুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু(৭২)। তিনি একসময় পাশের্^ই পূর্ব হাজীপুর আনোয়ারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন। জীবনের অধিকাংশ সময়ই ব্যয় করেছেন শিক্ষার পেছনে। এজন্য সবাই তাঁকে বাচ্চু স্যার হিসেবেই চিনেন। সেই বাচ্চু স্যার তাঁর অফিস কক্ষে বলেন, সারা জীবন শিক্ষা সম্প্রসারনের জন্য কাজ করেছি। জমি-জমা বিক্রি করে নিজের সংসার চালাই। তবুও আশায় বুক বেঁধেছি যে, বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হবে। ব্যাথা লাগে আমার শিক্ষকদের কষ্ট দেখে। আমার সহকর্মী শিক্ষকরা খুব কষ্ট করে দিনাতিপাত করছেন। স্কুলে ক্লাস নেওয়ার আগে পরে তাদের একবার ভালো করে নাস্তা করাতেও পারিনা। সম্মানীও দিতে পারছিনা। স্কুলের আয় নেই। আছে মেধাবী শিক্ষার্থী। আসলে আমরা সবাই অবহেলিত। আক্ষেপ করে বাচ্চু স্যার আরো বলেন, যদি আমার মৃত্যুর আগে বিদ্যালয়টি এমপিভুক্ত হয়েছে-এমন খবর পেতাম তাহলে আর জীবনে দুঃখ থাকতো না। মরেও শান্তি পেতাম। আমি গণমাধ্যমের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং উন্নয়নের রূপকার শেখ হাসিনার নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি যে, এই বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করুন। এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে এটাই আমার চাওয়া-পাওয়া।