নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের ৭০নম্বর খিদির গরিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কমলমতি ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক ম্যাডামরা প্রতিদিন এক হাটু থেকে মাজা পরিমান পচা পানি দিয়ে পায়ে হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করে। মানবসৃষ্ট জলাবদ্ধতায় প্রায় ৮বছর থেকে স্কুলের এমন পরিবেশের কারণে এলাকার সচেতন অভিভাবকরা আর এই স্কুলে তাদের সন্তানদের পাঠাতে চান না। ফলে প্রতি বছর কমছে শিক্ষার্থী। পচা পানি দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করার কারণে সর্দিজ¦র ছাড়াও নানা প্রকার চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক ম্যাডামরা। জলাবদ্ধতার কারণে নেই বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। সব জলমগ্ন থাকায় একটি মাত্র শৌচাগার ব্যবহার করেন সকল ছাত্রছাত্রী ও তাদের দুই শিক্ষক ও তিন ম্যাডাম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, অবস্থার পরিবর্তন না হলে করোনার কারণে বন্ধ থাকা শিক্ষকদের বদলি পদ্ধতি চালু হলেই এখানে কর্মরত শিক্ষকরা গণহারে বদলির আবেদন করবেন। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মহির উদ্দিন মোল্লা জানান, আগে চাপিলা, মহরাজপুর ও গরিলা গ্রামের বৃষ্টি পানি চলনবিলে নেমে যাওয়ার জন্য একটি খাল ছিল। এলাকার মানুষ মাছ চাষ করার জন্য অসচেতন ভাবে শত শত পুকুর কাটার সময় এই খাল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন খালটির আর কোন চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। যার কারনে বর্ষা মৌসুমের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত স্কুলটি জলাবদ্ধ হয়ে থাকে। বর্ষার পানি এখন শুধু স্কুল মাঠে নয় অনেক পুকুর মালিকের শোবার ঘরও জলমগ্ন করতে শুরু করেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক হুমায়ন কবির বলেন, প্রতিষ্ঠানটি তার নিজের এলাকায় হওয়ায় এখানে যোগদানের আগে থেকেই তারা এই জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য মানববন্ধনসহ নানা উদ্যোগ নিয়ে সফল হননি। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা একশর নিচে চলে এসেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনুরোধ করলেও অভিভাবকরা এমন পরিবেশে তাদের সন্তানকে আর পাঠাতে চান না। অনেকে অন্য গ্রামের স্কুলে ও মাদরাসায় তাদের সন্তানদের ভর্তি করেছে। স্থানীয়রা বলছেন, চাইলেও এখন সকল বন্ধ করে দেয়া সম্ভব নয় তাই রাস্তা থেকে স্কুল পর্যন্ত উচু করে ঢালাই রাস্তা নিমার্ণ এবং মাটি দিয়ে স্কুল মাঠ উচু করলেই এই সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে। স্থানীয় চাপিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন ভুট্টু বলেছেন, স্কুলের চারপাশে প্রভাবশালীরা অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর কাটায় বছরের সাত মাস স্কুলটি জলাবদ্ধ থাকে। এটা এই ইউনিয়নের ৭৫ভাগ এলাকার সমস্যায় পরিনত হয়েছে। একটা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে এত বড় সমস্যার সমাধান সম্বব হয়। নাটোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এরশাদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন আগামী সপ্তাহে তিনি নিজে স্কুলটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের সব ধরনের চেষ্টা করবেন।
নাটোর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেছেন, এ রকম চলতে পারে না। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি আজই খবর নিয়ে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা যেন সুস্থ্য সুন্দর পরিবেশে স্কুলে যাতায়াত করতে পারে তার প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহন করবো ইনশাআল্লাহ।