২০১৯ সালের তুলনায় চলতি বছরে দেশে হ্যাকিংয়ের হার বেড়েছে ১৩ শতাংশ। তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবীদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইনফরমেশন সিস্টেম অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন ঢাকা চ্যাপ্টারের এক প্রতিবেদন এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঘটনার হার বেড়েছে ২৮ দশমিক ৩১ শতাংশ। যা ২০১৯ সালে ছিল ১৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত এক বছরে হ্যাকিংয়ের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশ। আর ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের ঘটনা ছিল ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ কিন্তু এবার সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর বয়সভিত্তিক সাইবার অপরাধ বিশ্লেষণে দেখা গেছে ৮৬ দশমকি ৯০ শতাংশ ভুক্তভোগীর বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ কিশোর-তরুণরাই বেশি হ্যাকিংয়ের শিকার।
হ্যাকিংয়ের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে পড়ে ব্যাক্তিগত তথ্য। মানুষ এখন ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন, কম্পিউটার। এসব যন্ত্রে সংরক্ষিত থাকে নানারকম ব্যক্তিগত তথ্য। আর্থিক লেনদেনের তথ্যের পাশাপাশি রয়েছে ব্যক্তিগত ছবি, বার্তা-কথোপকথনসহ অন্যান্য বিষয়। হ্যাকাররা এগুলো হাতিয়ে নেওয়ার পর ভুক্তভোগীকে ব্ল্যাকমেইল করছে। বিশেষ করে নারীরা এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি বা কথোপকথন নিয়ে তাদের কাছে আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এমনকি এই ব্ল্যাকমেইলিং চলে দীর্ঘ সময় ধরে। প্রথমদিকে লোকলজ্জার ভয়ে টাকা দেয়া হলেও পরবর্তীতে আর সইতে না পেরে আইনের আশ্রয়ে যায় তারা। এক্ষেত্রে অনেক অপরাধী ধরা পড়লেও বেশিরভাগই অধরা। আবার আরেকটি চক্র রয়েছে যারা সংঘবদ্ধভাবে কাজ করে। এরা মানুষের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়।
হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষেরই প্রযুক্তি জ্ঞান সীমাবদ্ধ। শিক্ষিত অনেক মানুষ এখনো ঠিকভাবে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে পারে না। অথচ দেশে ক্রমেই বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। এটার ইতিবাচক দিকগুলোর সঙ্গে নেতিবাচক দিকগুলো ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ হারটা কেবল ভাবিয়েই তুলছে না, ভবিষ্যৎ নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে শঙ্কা। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সাইবার সংক্রান্ত জ্ঞানও বাড়াতে হবে। সবার আগে নিজে সচেতন হতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যেন সেগুলোতে প্রবেশের জন্য ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড যেন অন্য কারো কাছে না থাকে এবং সেগুলো যেন খুব সহজ না হয়। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্যও পদক্ষেপ জরুরি। আমরা মনে করি, সচেতন হলেই হ্যাকিং বহুলাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।