রংপুরে ইটভাটা স্থাপনের হিড়িক পড়েছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা শত শত ভাঁটা থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাসের ঝুঁকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। এই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে তাদের নজিরবিহীন নীরবতায়। কৃষিজমি ধ্বংস করে স্থাপিত একেকটি ইটভাটায় প্রতিদিন পুড়ছে শত শত গাছ। আগুনের উত্তাপ আর নির্গত গ্যাসে জ¦লে যাচ্ছে আশেপাশের ফসলের জমি। ইট তৈরি জন্য উপরিভাগ থেকে মাটি সংগ্রহ করায় উর্বরা হারাচ্ছে জমি।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলাতেই আছে প্রায় অর্ধ শতাধিক অবৈধ ইটভাটা। এসব ভাটার গর্ভে চলে যাচ্ছে কৃষিজমির টপ সয়েল। কয়লার বদলে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আর ইট তৈরির মৌসুমকে ঘিরে ভাটাগুলোতে মজুদ করা হয়েছে বিশাল আকারের মাটির স্তুপ।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত ১৯৯২ সালের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে 'কৃষি-জমিতে ইটভাটা নির্মাণ দ-নীয় অপরাধ'। কিন্তু এসবে কেউ কোন তোয়াক্কা করছে না।
পীরগঞ্জে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী মাত্র পাঁচ-ছয়টি ইটের অটোভাটা রয়েছে। ১৫টি ইউনিয়নে ৪৭টি ফিক্সড চিমনির ভাটায় ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি নিয়ে অবৈধভাবে কৃষি জমির টপ সয়েল ও জ¦ালানি হিসেবে কাঠের মজুদ গড়ে তোলা হয়েছে। ফিক্সড চিমনির ওইসব অবৈধ ভাঁটা পরিবেশ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ যেন ভেঙে না দেয় সেজন্য কৌশলে বেশকিছু ইটভাটার মালিক হাইকোর্টে রিট করে ইট তৈরি অব্যাহত রেখেছে। তারা প্রতিবছরই এভাবে হাইকোর্টে রিট করে ইটের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
সম্প্রতি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট এলাকায় বিধিবহির্ভূতভাবে সবুজ ধানখেতের মধ্যে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। এই ভাঁটা বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী আন্দোলন করছেন। তবু নির্মাণকাজ চলছে বলে কৃষকদের অভিযোগ। তাঁদের আশঙ্কা, ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু করলে আশপাশের কৃষিজমিতে ধান, পাটসহ অন্য ফসলের ফলনে বিপর্যয় ঘটবে। এ ছাড়া নির্মাণাধীন ভাটার পাশে রয়েছে বিশাল আমবাগান। নির্মাণাধীন ভাটার মালিক বলছেন, ইটভাটা নির্মাণের অনুমোদন নিতে আবেদন করেছেন। আবার ঔদ্ধত্য নিয়ে এ-ও বলছেন, বিধি মেনে কোথাও কোনো ইটভাটা নির্মাণ করা হয়নি।
অন্যদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, তিনি নাকি নতুন ইটভাটা নির্মাণে কোনো ছাড়পত্র দেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, নতুন করে কৃষিজমিতে ইটভাটা নির্মাণের বিষয়ে তাঁর জানা নেই। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি দেখবেন। তার মানে, কেউ অভিযোগ না দিলে প্রশাসনের কিছু করার নেই? ছাড়পত্র না নিয়েই এমন একটি অবৈধ কাজ হচ্ছে, সেটি তাঁরা বসে বসে দেখবেন? একটা ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সামর্থ্য তাঁরা রাখেন না? অবৈধ ইটভাটার দৌরাত্ম্য থামাতে সরকারকেই শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায়, পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হবে না।