রুপালি ইলিশের কদর আবহমান বাংলার এক অভাবনীয় খাদ্য সম্পদ। সমুদ্র, নদ-নদী পরিবেষ্টিত শ্যামল বাংলা হরেক রকম ফসল উৎপাদনে যে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে, সেখানে মৎস্য সম্ভারেও এই ব-দ্বীপের খ্যাতি বহুকালের। মাছে-ভাতে বাঙালী এমন সুললিত প্রবাদ আজও আমরা ধারণ করে যাচ্ছি। নদী বিধৌত উর্বর পলিমাটি যেমন অতি সহজেই কর্ষণযোগ্য, পাশাপাশি মাছ উৎপাদনেও আমাদের জলজসম্পদ বিশ্বে নজরকাড়া। পদ্মা, মেঘনা কিংবা সাগরের ইলিশ ভোজনরসিক বাঙালীর অতিপ্রিয় খাদ্য তালিকার যেমন শোভাবর্ধন করে, তেমনি বিদেশেও বাংলার ইলিশের চাহিদা কম নয়। শুধু রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন নয়, উপহার সামগ্রী হিসেবেও ইলিশের কদর এই দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং দৃষ্টিনন্দন এই রুপালি ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছের মর্যাদায়ও সমাসীন। সেই উপাদেয় ইলিশের স্বাদ আমরা একপ্রকার ভুলতেই বসেছিলাম। বর্তমান সরকার উন্নয়নের দুরন্ত অভিগামীতায় সামনের দিকে এগিয়ে গেলে হারিয়ে যাওয়া অনেক ঐশ্বর্য ও ঐতিহ্য নতুন মাত্রায় সামনে চলে আসে। আর এখানেই রুপালি ইলিশের পুনর্জাগরণ ঘটে। গত এক দশকে এরই অভিযাত্রায় বর্ণিল ইলিশ স্বরূপে ফিরে এসে মাছে-ভাতে বাঙালীর রসনা যুগিয়েই চলেছে।
ইলিশের ভরা মৌসুমের আগে যেমন জাটকা ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তেমনই মা ইলিশকেও সুরক্ষিত রাখতে নিষেধাজ্ঞা জারি করাও এক আবশ্যক কর্মযোগ। তেমন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় এখন মা ইলিশকে যথেষ্ট সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে। প্রতিবছর ইলিশের ভরা প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ৩ অক্টোবর মধ্য রাত থেকে ডিম ভরা ইলিশকে সযতœ পরিচর্যায় আটকে রেখে তাদের প্রজননের সুযোগ দেয়া এই নিয়মবিধির আওতাভুক্ত। সঙ্গতকারণেই ৩ থেকে ২৫ অক্টোবর সব ধরনের ইলিশ ধরার ওপর কঠোর নজরদারি শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সারাদেশের ৩৮টি জেলায় এই মাছ না ধরার অভিযান শুরু হয়েছে একযোগে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় মৎস্য অধিদফতর, বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টরা নিষেধাজ্ঞার ওপর কড়া নজর রাখবে। দেশের প্রধান নদ-নদী, সমুদ্র ছাড়াও ইলিশ উৎপাদনের মূল স্থানগুলোতে যে কোন ধরনের ইলিশ ধরা একেবারেই বন্ধ রাখা হবে। ৫৫ হাজার ৯৪৪টি জেলে পরিবারের জন্য ১১ হাজার ১১৮ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। যাতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলেও তাদের প্রতিদিনের আহার সংস্থানে কোন ধরনের অসুবিধা না হয়। তবে সব সরকার করবে এমন আশা করা অনুচিত। দেশটা সকল মানুষের এবং ইলিশও সবার জন্য অবাধ, মুক্ত ও সাশ্রয়ী হওয়া একান্ত আবশ্যক। তবে মাছ চাষীদের জন্য সরকারী সহযোগিতা যেন সঠিক জায়গায় পৌঁছে যায়, তাতেও কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। দুর্নীতির কবলে পড়ে সব যেন নয় ছয় হয়ে না পড়ে। তাই ইলিশ ধরা থেকে বিরত রাখতে জেলেদের সহায়তাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।