সরাইলে ফরহাদ মিয়া (২৯) নামের এক সৌদী প্রবাসীর মৃত্যুকে ঘিরে নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবার ও স্বজনদের দাবী পাওনা টাকা আত্মসাৎ করতে আপন খালাত ভাই হেলাল পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে ফাঁসির নাটক সাজিয়েছেন। হেলালের পরিবার বলছে তাদের ভবনের দ্বিতীয়তলায় পরিত্যাক্ত কক্ষে ফরহাদ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার পানিশ্বর বাজারের হেলালের ভবনের দ্বিতীয়তলা থেকে ফরহাদের লাশ উদ্ধার করেছে সরাইল থানা পুলিশ। ময়না তদন্ত শেষে বুধবার সন্ধ্যায় ফরহাদের লাশ দাফন করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের পরই মুঠোফোনটি বাড়িতে রেখে গা ঢাকা দিয়েছেন হেলাল। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, শাখাইতি গ্রামের মোল্লারহাটি এলাকার হারিছ মিয়ার ছেলে ফরহাদ মিয়া। দুই সন্তানের জনক ফরহাদ গত ৩-৪ বছর ধরে সৌদীতে থাকেন। ফরহাদের আপন খালাত ভাই হেলাল। পানিশ্বর দক্ষিণ বাজারে হেলালের রয়েছে একটি দ্বিতল ভবন। নীচতলায় তার ‘হুমায়ুন ষ্টোর’ নামের মুদির দোকান। সৌদীতে থাকাবস্থায় বিশ্বাস করে ফরহাদ খালাত ভাই হেলালের কাছে ৫ লক্ষাধিক টাকা জমা রাখেন। ৫ মাস আগে দেশে এসেছেন ফরহাদ। আগামী ১৭ অক্টোবর তার প্রবাসে চলে যাওয়ার কথা। গত বেশ কিছু দিন ধরেই হেলালের কাছে জমানো টাকা চাচ্ছেন ফরহাদ। হেলাল বিভিন্ন অজুহাতে ঘুরাচ্ছেন। একসময় এই টাকাকে কেন্দ্র করে তাদের সম্পর্কে কিছুটা ফাঁটল ধরে। গত মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে সারা দিন ফিরেননি ফরহাদ। দুপুরের দিকে ফরহাদের স্ত্রী বুশরা বেগম (২৩) তার স্বামী ফরহাদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেন। বারবারই ফোনটি রিসিভ করছিলেন হেলাল। হেলাল আছে, আসবে ইত্যাদি কথা বলে বুশরাকে শান্তনা দিচ্ছিলেন হেলাল। সন্ধ্যায় হেলাল জানায় তার ভবনের দ্বিতীয়তলায় ফরহাদের আত্মহত্যার বিষয়টি লোকজনকে জানায়। রাতে পুলিশ ফরহাদের মরদেহ উদ্ধার করে। সরজমিনে দেখা যায়, একটি রশিতে ফরহাদের মরদেহ ঝুলছে। আর তার দুই পা ভাজ করা। হাঁটু দুটি মেঝেতে লেগে আছে। নিহতের বাবা হারিছ মিয়া বলেন, আমার ছেলে হেলালের কাছে অনেক টাকা জমা রেখেছিল। এখন হেলালের কাছে ওই টাকা চাওয়ায় পরিকল্পিত ভাবে ফরহাদকে হত্যা করে ফাঁসির নাটক তৈরী করেছে। টাকা আত্মসাৎ করতেই তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছে। ফাঁসি দিলে হাঁটু মেঝেতে লেগে থাকবে কেন। সমস্ত শরীর কো ঝুলে থাকার কথা। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। হেলালের মুঠোফোনে ফোন দিলে তার স্ত্রী আবেদা বেগম ফোন রিসিভ করে কাঁপাকাঁপা গলায় বলেন, আমার স্বামী বাড়িতে নেই। কোথায় গেছেন জানি না। তিনি ফোন সেটটি নেননি। হেলালের স্বজনরা জানায়, ফরহাদ আত্মহত্যা করেছে। তাকে হেলাল খুন করেনি। ইউপি চেয়ারম্যান মো. দ্বীন ইসলাম বলেন, হাঁটু মাটিতে লেগে থাকায় মৃত্যুর বিষয়টি মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করছে। তদন্ত করে সঠিক বিষয়টি বের করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে জানতে উপপরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। প্রসঙ্গত: গত পাঁচ মাসে পানিশ্বর ইউনিয়নে ৫ জন খুনের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে দুজনই প্রবাসী।