কৃষিভিত্তিক উত্তরাঞ্চলের কৃষিপন্য সহজে বিপননের ক্ষেত্রে অবদান রাখার পাশাপাশি অর্থনীতির প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে পশ্চিম রেলের অধিন সান্তাহার-রহনপুর রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়ন ও প্রস্তাবিত উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবি জানিয়েছে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। একই সাথে অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চলকে আরো সমৃদ্ধ করতে অবিলম্বে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নের দাবিও জানানো হয়েছে। বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের এই প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নের দাবিতে বুধবার (৬ অক্টোবর) নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে সকাল ১০টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন-সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে এ দাবি জানান রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে একাত্ত্বতা প্রকাশ করেন রাজশাহীর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকার সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত, সাংবাদিক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফাত্তাহ, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাংগাঠনিক সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান, উন্নয়নকর্মী গোলাম নবী রণি, নওগার সাংবাদিক রেজাউল ইসলাম সেলিম, নারী নেত্রী সেলিনা বেগম, প্রকৌশলী খাজা তারেক, শিক্ষক আলাউদ্দিন আল আজাদ, যুব নেতা একেএম যোবায়েদ হোসেন, ডা. জাহিদ হাসান, যুব নেতা আল-আমিন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলপথের সান্তাহার থেকে রহনপুর পর্যন্ত ৯৯ কিলোমিটার রেলপথ প্রকল্প ১০০ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। ফলে রহনপুর ও সান্তাহারবাসীর রেলপথের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে। তারা বলেন, এই রেলপথ প্রকল্পটি দীর্ঘ ৮ যুগের বেশি সময় ধরে ফাইলবন্দি। কিন্তু প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখলে, কৃষিভিত্তিক উত্তরাঞ্চলের কৃষিপন্য সহজে বিপননের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। এতে অর্থনীতির প্রসার ঘটবে। এ অঞ্চল হবে আরো সমৃদ্ধ।
বক্তারা আরো বলেন, বর্তমান সরকার নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও রহনপুর ও সান্তাহার রেলপথ প্রকল্পটি যুগের পর যুগ ধরে ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে। অথচ, এ প্রকল্পটি নতুন করে বাস্তবায়ন করলে এ অঞ্চলে নতুন আশার সঞ্চার সৃষ্টি করবে।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ১৯২০ সালে তৎকালীণ ইস্টার্ন বেঙ্গল স্টেট সরেজমিন রেলওয়ে প্রকল্পটি সার্ভে সম্পন্ন করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে ৩ বার জরিপের প্রতিবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হলেও ফাইলটি বারবার চাপা পড়ে যায়। সেসময় ১৯৪ পৃষ্ঠা লিখিত রিপোর্টে এ প্রকল্পের একটি ব্লুপ্রিন্ট তদানিন্তন সরকারের নিকট দাখিল করা হয়। সবকিছু সম্পন্ন হওয়ার পর রেলওয়ে বোর্ড হঠাৎ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তবে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে এ প্রকল্পটি আশার সঞ্চারিত হলেও ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ের পর প্রকল্পটিও মুখ থুবড়ে পড়ে।
জামান খান আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যোগাযোগ ও অন্যদিকে পণ্যে পরিবহণে সুবিধা হবে। শুধু তাই নয়, ভারত ও নেপালের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যও আরো প্রসারিত হবে।’
একই সমাবেশ থেকে প্রস্তাবিত ‘উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প’ বাস্তবায়নেরও দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ এ প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘ দুই যুগ করে আন্দোলন করে আসছে। সরকারের ডেল্টা প্ল্যানে থাকা এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি বলেও উল্লেখ করেন তারা।
বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ফসল হিসেবে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ছিলো এ প্রকল্প বাস্তবায়ন। বরেন্দ্র অঞ্চলকে মরুময়তার হাত থেকে রক্ষা ও ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারের মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষিতে প্রান ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নেরর দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে।
বক্তারা আরো বলেন, ১৯৮৮ সালের দিকে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রথম দাবি উঠে রাজশাহী থেকে। এ নিয়ে জাপানের জাইকা ও আইডাবলুএম এ প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক পরীক্ষা নিরিক্ষা ও গবেষণা করে অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে সুপারিশ করে। কিন্তু সেই সময় থেকেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বিদেশী সাহায্য সংস্থার অজুহাতে প্রকল্পটি লাল ফিতায় আটকে রাখা হয়। অথচ, এ অঞ্চলের প্রাণের দাবি উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাজশাহী নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা তথা বরেন্দ্র অঞ্চলকে মরুময়তার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।