জীবনের তাগিদে প্রায়ই আমাদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে হয়। দূরপাল্লার যাত্রার ক্ষেত্রে সবাই বাস, ট্রেন, লঞ্চ কিংবা অন্যান্য যানবাহন ব্যবহার করে থাকেন। তবে তুলনামূলক আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য অনেকে ট্রেনকে বেশি বেছে নেন। তাছাড়া চলাচলের ক্ষেত্রে ট্রেনের ভাড়াও সাশ্রয়ী। আমাদের দেশে অনেকে খেলার ছলে বা অসৎ উদ্দেশ্যে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে থাকে। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে, যা দুঃখজনক। এ ধরনের অমানবিক আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জসিম উদ্দিন (৪০) নামের ভ্রাম্যমাণ পণ্যের একজন হকার চলন্ত ট্রেনে ছোঁড়া ঢিলে গুরুতর আহত হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঘাচং স্টেশন এলাকায় তিতাস কমিউটার ট্রেনে এই ঘটনা ঘটেছে। এর আগে পাথরের আঘাতে যাত্রীর চোখ হারানোর বহু ঘটনা ঘটেছে। এমনকি প্রাণহানিরও নজির আছে। এর পাশাপাশি ট্রেনের জানালার কাচ ভাঙছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের হিসাবমতো, গত পাঁচ বছরে ট্রেনে পাথর ছুড়ে দুই হাজারের বেশি জানালা-দরজা ভাঙার ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ঢাকাগামী কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনেও পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। এ সময় পাথরের আঘাতে ইঞ্জিন কামরার জানালার কাচ ভেঙে সহকারী ট্রেনচালকের দুই চোখে বিদ্ধ হয়। তিনি গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তাঁর একচোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
চলন্ত ট্রেনের দিকে পাথর ছোড়ার এসব ঘটনায় চিন্তায় পড়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। পুলিশও শত চেষ্টা করে পাথর ছোঁড়া বন্ধ করতে পারছে না। ফলে যাত্রীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষকে ভূমিকা রাখতে হবে।
চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদ-ের কথা বলা আছে আইনে। আর কোনো রেলযাত্রী মারা গেলে দ-বিধির ৩০২ ধারায় ফাঁসির বিধান ও পাথর নিক্ষেপকারী অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে সে ক্ষেত্রে তার অভিভাবককে শাস্তি ভোগ করতে হবে। তবে শুধু আইন করে এ ধরণের অপরাধ বন্ধ করা যাবে না। এ ধরণের অপরাধ নিরসনের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। পাথর নিক্ষেপের কুফল, এর অমানবিক দিক সম্পর্কে ব্যাপক ভিত্তিতে আলোচনা করতে হবে। পাথর নিক্ষেপে ভুক্তভোগী ব্যক্তির পাশাপাশি রাষ্ট্রেরও যে বহুবিধ ক্ষতি সাধিত হয় সেটি তুলে ধরতে হবে।
দু-একটি ঘটনার পেছনে হিংসাত্মক মনোভাব থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মূলত রেললাইনের পাশে বসবাসকারী কম বয়সী ছেলেরা খেলার ছলে এমন কাজ করে থাকে। এ কারণে শুধু আইনি পথে এই সমস্যার সমাধান হবে না। যেসব এলাকায় এই প্রবণতা বেশি, সেসব এলাকায় মাইকিং করা, পোস্টার সাঁটানো ও লিফলেট বিলি করার মতো কার্যক্রম হাতে নেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকে সর্বাত্মক সতর্ক হতে হবে। সামাজিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ক্যাম্পেইন কর্মসূচি পালন করা যেতে পারে। প্রত্যেক মসজিদে জুমার বয়ানে ইমাম সাহেবকে এ বিষয়ে জনসাধারণকে অবহিত করতে পারে।