যশোরের মণিরামপুরে রাস্তার উপর খুপড়ি ঘর বানিয়ে গবাদি পশুর সাথে এক সাথে চলছে থাকা ও খাওয়া-দাওয়া। শৌচাগার ও টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। একই সাথে গো-খাদ্যেরও সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক কাজ সারতেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতে করে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে ভ’ক্তভোগি মানুষ। অপর দিকে আকাশে মেঘ দেখলেই জলাবদ্ধ অধিবাসীদের মাঝে আরও বেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আকাশের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বাড়ি-ঘর পানি তলিয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধ ভবদহ বিলপাড়ের হাজারো পরিবার ঠাঁই নিয়েছে রাস্তার উপর। ভবদহ বিলপাড়ের প্রায় ৮০ গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
সরেজমিনে মণিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া, বাজেকুুলটিয়া, সুজাতপুর, হাটগাছা, লখাইডাঙ্গা, আ¤্রঝুটা, আলিপুর, পোড়াডাংগাসহ একাধিক গ্রাম ঘুরে এসব চিত্র চোখে পড়ে। ওই এলাকার অধিকাংশ বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত ঘরবাড়ি হারা এসব ভূক্তভোগিরা মণিরামপুর-নওয়াপাড়া ভায়া মশিয়াহাটী মেইন সড়কের হাটগাছা এলাকার সড়কের উপর খুপড়ি ঘর বানিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। একটু অবস্থা সম্পন্ন পরিবার যাতায়াতের জন্য বাড়ির উঠানে বাঁশের সাঁকো ও নৌকা বানিয়ে নিয়েছে। আর অস্বচ্ছল পরিবারগুলো রাস্তার উপর খুপড়ি ঘর বানিয়ে গৃহপালিত পশু নিয়ে এক সাথে বসবাস ও দিনাতিপাত করছে। খুপড়ি ঘরের এক পাশে থাকছে গরু-ছাগল আরেক পাশে চৌকিখাট বানিয়ে রাত যাপন করছে। এমনকি সেখানেই আবার চলছে খাওয়া-দাওয়া।
হাটগাছা গ্রামের নারায়ন মন্ডল, ক্ষুদেরাম বিশ্বাস, গুরুদাস মন্ডল, মালতি বালাসহ একাধিক নারী-পুরুষের সাথে কথা হয়। তারা বলেন, আর কতকাল এভাবে কষ্টে দিন যাপন করবেন তারা। ভবদহ দিয়ে পানি সরে গেলে তাদের কষ্টের কিছুটা লাঘোব হবে। কিন্তু কেউ আমাদের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না। এভাবে গরু-ছাগলের সাথে আর কত দিন একসাথে দিন কাটাবো আমরা।
উপজেলার হাটগাছা গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ নারায়ন চন্দ্র মল্লিক বলেন, খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার মানুষ। তিনি আরও বলেন বর্তমান আকাশে মেঘ দেখলে আমাদের মাঝে ভয় এবং আতঙ্ক বেশি বিরাজ করছে। এ ছাড়া শৌচাগার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় প্রকৃতির কাজ সারতে চরম বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় কুলটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায় বিশুদ্ধ পানির সংকটেরর কথা উল্লেখ করে বলেন, শিঘ্রই অস্থায়ী ভিত্তিতে স্যানিটেশন ও নলকূপ স্থাপন করা হবে। এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। অতিদ্রুত সেগুলোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও তিনি দাবী করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগকে দ্রুততার সাথে অস্থায়ী ভিত্তিতে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।