রংপুরের পীরগাছায় দ্বিতীয় দফায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী বিদ্যুৎ কুমার রায়কে অবাঞ্চিত ঘোষনা করেছে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ। দলের কোন পদে না থেকেও নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। এ ব্যাপারে শনিবার রাতে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এমন ঘোষণা দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত ৫ প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন সদস্য। অপরদিকে গতকাল রোববার সকালে উপজেলার কান্দি ইউনিয়নবাসীর ডাকে এক প্রতিবাদ সভা স্থানীয় মাঝবাড়ি মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কান্দি ইউনিয়নে আমিনুল ইসলাম রাজ্জাককে নৌকার মনোনয়ন দেওয়ায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। উভয় সমাবেশ থেকে মনোনীত প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নতুন করে দলের ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়ার দাবি করা হয়।
জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষনা করা হয়। এতে উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ থেকে ৩৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাবি করে দলের মনোনয়ন কেনেন। পরে গত বৃহস্পতিবার রাতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে ৬ জন নতুন এবং ২ জন বর্তমান চেয়ারম্যানের নাম ঘোষনা করা হয়। এতে দীর্ঘদিন থেকে দলের জন্য কাজ করা ত্যাগী নেতারা বাদ পড়ে যান। এসব নিয়ে দলের ভিতর অসন্তোষ দেখা দিলে গত শনিবার তাম্বুলপুর হাইস্কুল মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ। ওই ইউনিয়নের সহ-সভাপতি আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য দেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডাঃ জাহিদুল হক সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বিপ্লব, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম কাজল, তাম্বুলপুর ইউনিয়ন সভাপতি আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শাহিন সরদার, সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা নুরুজ্জামান বিএস, সোহরাব হোসেন মিঠু, আবুল কালাম আজাদ খোকা, যাদব চন্দ্র রায়, আ.লীগ নেত্রী মর্জিনা বেগম, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সম্পাদক মোরশেদ আলম প্রমুখ। সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতা নুরুজ্জামান বিএস ও সোহরাব হোসেন মিঠু নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোসনা দেন।
অন্যদিকে গতকাল রোববার সকালে কান্দি ইউনিয়নের দলীয় প্রার্থী আমিনুল ইসলাম রাজ্জাকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সমাজ সেবক শামীমুল হাসান কাজল এর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন, কান্দি ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খাঁন, আবদুল আজিজ, মোজাহারুল আলম, আঃ আউয়াল, দুলাল মিয়া, রাশেদুল ইসলাম, মনিন্দ্র নার্থ, আঃ কাদের, আবদুল আহাদ সরকার।
তাম্বুলপুরের প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, নৌকা আদম ব্যাপারীর কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। যাকে নৌকা দেওয়া হয়েছে সে দলের কেউ না। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্তের বাহিরে প্রার্থী ঘোষণা করায় তা প্রত্যাখান করা হলো। দলীয় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নতুন করে দলের মধ্যে প্রার্থী দেয়া হোক।
কান্দির সমাবেশে বক্তরা বলেন, যাকে নৌকা দেয়া হয়েছে তিনি একজন চাকুরীজীবি। দলের সভা-সমাবেশে থাকেন না। তৃর্ণমূলের মনোনীত ব্যক্তিকে ছাড়া কিভাবে তিনি অজ্ঞাত খুটির জোরে নৌকা পেলো তা জনগন মেনে নেবে না।
এছাড়াও উপজেলার পারুল ইউনিয়নে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খাঁন ও অন্নদানগর ইউনিয়নে বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন নির্বাচন করবেন বলে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তছলিম উদ্দিন বলেন, দলীয় প্রার্থী ঘোষণায় অন্য ইউনিয়নগুলোর চেয়ে তাম্বুলপুর ইউনিয়নে ব্যতিক্রম ঘটেছে। এতে বিদ্যুৎ কুমার রায় কি ভাবে মনোনয়ন পেলো তা সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী সেখানে উপেক্ষিত হয়েছে। সেকারণেরই তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এ ছাড়া অন্য ইউনিয়নে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা তাদের বিষয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করবো। পরে দল তাদের বিষয় সিদ্ধান্ত নেবে।