শিশু শ্রমিক। নাম সাদ্দাম (১৬)। পিতা মোহাম্মদ আলী। বাড়ি সরাইল সদর ইউনিয়নের ছোট দেওয়ানপাড়ায়। গত ১৫ দিন আগে মা হারিয়েছে সাদ্দাম। মায়ের শোক কাটিয়ে ওঠতে পারছিল না শিশুটি। তারপরও পরিবার ও নিজের আহার যোগাড় করতে ছুটছিল কাজের পেছনে। গত রোববার রাতে হাইওয়ে থানা থেকে ২/৩ কিলোমিটার দূরে এক দূর্ঘটনায় মহাসড়কে ঝড়ল শিশু শ্রমিক সাদ্দামের প্রাণ। বাঁচার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল সাদ্দামের পরিবারের। মৃত্যুর একদিন পরও এই দূর্ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না খাঁটিহাতা হাইওয়ে পুলিশ। সোমবার শিশু সাদ্দামের মরদেহ পারিবারিক ভাবেই দাফন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনরা জানায়, পিতা মাতাসহ ৪ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম শিশুটি ছিল সাদ্দাম। নাদোশ নোদোশ ফুটফুটে চেহারা। সদা হাস্যজ্জ্বোল সাদ্দাম ছিল অত্যন্ত কর্মঠ। প্রসাব ফেরত পিতা অসুস্থ্য। গুরূতর অসুস্থ সাদ্দামের মা। রয়েছে একমাত্র ছোট একটি বোন (১৩)। সকলের ভরসার স্থল শিশু সাদ্দাম। অভাবের তাড়নায় পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছিল শিশুটি। যে সময়ে ঘুরে ফিরে লাফিয়ে খেলাধূলা করার কথা। যে সময়ে বই হাতে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা। ঠিক সেই সময়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে আহার দিতে শ্রম বিক্রি করতে থাকে সাদ্দাম। টাইলস্ মিস্ত্রীর সাহায্যকারী। মাঝে মধ্যে পিকআপ ভ্যানও চালাতো। সকাল থেকে বিকেল কখনো সন্ধ্যা। ক্লান্তি নেই শিশুটির। এরপর ৪-৫ শত টাকা হাতে পায়। দারূন খুশি সাদ্দাম। ভুলে যায় সারা দিনের কষ্ট। এই টাকা দিয়েই পরিবারের সকল খরচ মিটাতে হয়। কষ্টেশিষ্টে ভালই চলছিল সাদ্দামের পরিবার। কিন্তু হঠাৎ করে কাল মেঘ নেমে আসে সাদ্দামের পরিবারে। গুরূতর অসুস্থ্যতা জনিত কারণে গত ১৫ দিন আগে মারা যায় সাদ্দামের মা। মায়ের মৃত্যু শোক ভুলার আগেই মহা প্রলয় কেড়ে নেয় শিশু সাদ্দামের জীবন। গত রোববার সন্ধ্যায় মনির নামের এক পিকআপ ভ্যান মালিকের মটরবাইকে করে শাহবাজপুরের দিকে গিয়েছিল শিশুটি। ফেরার পথে পেছনে বসা ছিল সাদ্দাম। সন্ধ্যার পর কুট্রপাড়া খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা থেকে মাত্র ২/৩ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাড়িউড়া ও ইসলামাদের মাঝামাঝি স্থানে যাত্রীবাহী একটি বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে সড়কের পাশে ছিটকে পড়ে মটরবাইকটি। গুরূতর আহত হয় মনির ও সাদ্দাম। আশঙ্কাজনক ঢাকা নেয়ার পথে ভৈরবের পৌঁছার আগেই মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়ে শিশু সাদ্দাম। আর মনির ভর্তি হয় জেলা সদর হাসপাতালে। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার পুলিশ। খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজালাল আলমের মুঠোফোনে ফোন দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে চমকে যান। পরে বলেন, আমি তো এই দূর্ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। কবে কোথায় ঘটেছে? আমাকে নাম ঠিকানা দেন। খুঁজ খবর নিয়ে দেখছি।