এয়ারপোর্ট মার্কেটের ব্যবসায়ীরা সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবস্থাপককে নগদ উপঢৌকন না দেয়ায় দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের এয়ারপোর্ট মার্কেটটি। ফলে শতাধিক দোকানি বেকার হয়ে পড়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। একই সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সহ¯্রাধিক শ্রমজীবী মানুষ কাজ হারা হয়েছে। বর্তমানে পরিবারের সদস্য নিয়ে তারা হাভাতে দিন কাটাচ্ছে। এয়ারপোর্ট মার্কেটের দোকানি আলমগীর, হেলাল, আসাদসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে জানান, সৈয়দপুর বিমানবন্দরের বর্তমান ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষ বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার অজুহাতে আকর্স্মিক ভাবে দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়। পরে আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে বলেন। আমরা তার কথা মতো বলি, বিদ্যুৎ বিলের কপি দেন, আমরা খাই বা না খাই বিল পরিশোধ করবো। তিনি আমাদের এমন কথা শুনে সাফ জানিয়ে দেন নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হলে প্রতি দোকানিকে নগদ উপঢৌকন দিতে হবে। যার পরিমাণ টাকার অংকে ৪০ হাজার। আমরা তার এ অনৈতিক দাবি মেটাতে অপারগতা প্রকাশ করি। তিনি আমাদের এমন কথা শুনে আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরে অনেক অনুরোধ করা সত্ত্বেও বিমানবন্দরের ওই ব্যবস্থাপক দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়নি। দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে মার্কেটের দোকানগুলো। দোকানে বিদ্যুৎ না থাকায় ক্রেতারা দোকানে আসে না। ফলে বেচাকেনা দিন দিন কমতে থাকে। বাড়তে থাকে মহাজনের ধারদেনা। ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়েছে এয়ারপোর্ট মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। দোকানে বসে থাকলেই পাওনাদাররা তাগাদা করতে আসে। পাওনাদারদের চাপে অনেক দোকানি দোকান বন্ধ করে দিয়ে বাড়িতে বেকার সময় কাটাচ্ছে। আয় উপার্জনহীন হয়ে পড়ায় অনেক দোকানির পরিবারের সদস্যরা পেটের তাগিদে পেশা বদল করছে। অনেকে জীবন বাঁচানোর জন্য করছে দিন মজুরি। এসব মজুররা যেদিন কাজ পায় সেদিন তাদের মুখে অন্ন জোটে। কাজ না পেলে থাকতে হয় ক্ষুধার্ত। অথচ ছয় মাস আগেও বিমানবন্দর মার্কেটটি দিন রাত ক্রেতা সাধারণে ভরা থাকতো। জম্পেশ বেচাকেনা হতো। ওই সময় প্রতিদিন সৈয়দপুর-ঢাকা ও ঢাকা-সৈয়দপুর ১১টি ফ্লাইট যাতায়াত করতো। এ সময় উভয় দিক থেকে যাতায়াতকারী যাত্রী সংখ্যা ছিলো প্রায় এক হাজার ৪০০। বর্তমানে নতুন রুট চালু হয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে বিমানের সংখ্যা। যাত্রী সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর হয়ে বর্তমানে সরাসরি সৈয়দপুর-কক্সবাজার ও সৈয়দপুর-চট্টগ্রাম যাত্রীবাহী বিমান যাতায়াত করছে। তাছাড়াও ঢাকা-সৈয়দপুর ও সৈয়দপুর-ঢাকা নিয়মিত বিমান চলাচল করছে। সব মিলিয়ে ১৪টি যাত্রীবাহী বিমান সৈয়দপুর-ঢাকা, সৈয়দপুর-কক্সবাজার ও সৈয়দপুর-চট্টগ্রাম সরাসরি যাতায়াত করছে। বিমান যাত্রীদের সিএফ ও রিসিভ করতে আত্মীয় স্বজনরা বিমানবন্দরে আসে। সব মিলিয়ে এসব মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে ছয় থেকে সাত হাজার। যাত্রীদের আত্মীয় স্বজনরা সময় কাটাতে এয়ারপোর্ট মার্কেটে যায়। এতে দোকানিদের বেচাকেনাও ভালো হয়। কিন্তু দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় কোন ক্রেতা দোকানে বসতে চান না। আর ক্রেতা দোকানে না বসলে বেচাকেনাও হয় না। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন না থাকার কারণে ক্রেতার অভাবে এয়ারপোর্ট মার্কেটটি খাঁ খাঁ করছে। অভিযোগ রয়েছে, বিমাবন্দর টার্মিনালের ভেতরে গড়ে ওঠা ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জমজমাট করতে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক এয়ারপোর্ট মার্কেটটি সুকৌশলে বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যক্তিগত ভাবে সুবিধা লুটতে এমন কৌশল নেয়া হয়েছে বলে অনেকের সঙ্গে কথা বলে তাদের মন্তব্যে জানা গেছে।
নগদ উপঢৌকন না পাওয়ায় এয়ারপোর্ট মার্কেটের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এমন অভিযোগ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষের সঙ্গে। তিনি বলেন, হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সংযোগ বিচ্ছিন্নের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলো।