মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতার উপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ত্রিমোহনী ও কাঠালবাড়ি এলাকায় রাস্তা অবরোধের ঘটনা ঘটে। ফলে কুড়িগ্রাম জেলার সাথে সড়ক পথে সকল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। চরম দুর্ভোগে পরে যাত্রীরা। ঘটনার সূত্রপাত ঘটে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ও রংপুর বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক’কে অভ্যর্থনা জানানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায়। সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমানসহ অত্যন্ত ১০জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিতসভা শুরুর প্রাক্কালে এক প্্েরসব্রিফিং এ সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ৫সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরদিকে শেষ বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ন.ম ওবায়দুর রহমান বাদী হয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাজু আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে আসামি করে কুড়িগ্রাম সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানাযায়, কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউজে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় অংশ গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি ও রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক কে অভ্যর্থনা জানানোর সময় কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। সার্কিট হাউজ এর বেশ কয়েকটি জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলী এবং সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে বলে জানান, কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খান মো: শাহরিয়ার। যেকোন উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেজন্য গতরাত থেকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন,সার্কিট হাউসে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক এর উপস্থিতিতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাজু আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর আতর্কিত হামলা চালায়। এতে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ন.ম ওবায়দুর রহমান,সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু,যুব মহিলা লীগ নেত্রী আফসানা মিমিসহ প্রায় ১০জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় ছাত্রলীগের সদস্যরা সার্কিট হাউজেও ভাংচুর চালিয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাজু আহমেদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা এবং শফিক ভাইয়ের নামে শ্লোগান দেয়া হয়। এ সময় জেলা আওয়ামীলগের সাধারণ সম্পাদকের নামে শ্লোগান না দেয়ায় যুবলীগের কয়েকজন সন্ত্রাসী কর্মী ও মাদক, হাতকাটাসহ ১১/১২টি মামলার আসামি আনোয়ার, তুহিন, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল আমিন সরকার লিংকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহিমসহ বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীরা উত্তেজিত হয়ে আমাকে লাঞ্চিত করে গায়ে থাকা পাঞ্জাবি ছিড়ে দেয়। এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের সাথে উভয় পক্ষের ধাক্কা-ধাক্কির ঘটনা ঘটে।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন,কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের মাঝে কোন গ্রুপিং নেই। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুর ছত্রছায়ায় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল আমিন সরকার লিংকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহিমের নেতৃত্বে আজকের ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত এবং সাজানো। তারা অতর্কিতভাবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির উপর হামলা এবং তার শরীর পাঞ্জাবি ছিড়ে ফেলে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
কেন্দ্রীয় কমিটি ও রংপুর বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগের কেউ হতে পারে না। গতকাল যা ঘটেছে তা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। এ ঘটনার সাথে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিতসভার কোন সম্পর্ক নেই। এটা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন ঘটনাও নয়। কারো ছায়া তলে থেকে কেউ দলের ভিতর বিভেদ ও বিভাজন করার চেষ্টা করছে। আমরা এজন্য ব্যথিত ও দুঃখিত। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য ৫সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে আছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এমপি, আসলাম সওদাগর এমপি, এম এ মতিন এমপি, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন ও আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন। তদন্তে যেই দুষি হিসাবে চিহিৃত হবে তার বিরুদ্ধে দল সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করবে। কারণ হামলাকারীরা কেউ দলের প্রকৃত কর্মী হতে পারে না। আওয়ামী লীগ একটি সু-সংগঠিত দল
। দেশের গন্ডিপিরিয়ে আন্তর্জাতি মহলে প্রশংসিত দল। সংগঠনের সভানেত্রীর নির্দেশে দলকে সু-সংগঠিত করার জন্য এবং তৃণমুল পর্যায়ে আসন্ন নির্বাচনে দলের সঠিক নেতা নির্বাচনের লক্ষ্যে সারাদেশে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কুড়িগ্রাম জেলা কমিটির এ বর্ধিত সভা পূর্ব নির্ধারিত।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খান মো: শাহরিয়ার বলেন,সার্কিট হাউজে কেন্দ্রীয় নেতাকে অভ্যুত্থনাকে কেন্দ্র করে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। যেকোন উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেজন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ-সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।