যশোরের মণিরামপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ কাজ দরপত্রের প্রায় আড়াই বছর পার হলেও শুরু হয়নি। এ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, গণপূর্ত বিভাগ, যশোর একে অপরকে দোষারোপ করছেন। সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত কর্তৃপক্ষ বলছে করোনার কারণে কাজটি শুরু করা সম্ভব হয়নি, তবে অচিরেই নির্মাণ কাজ শুরুর আশ্বাস দিলেন পিডব্লিউডি (পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট-গণপূর্ত বিভাগ, যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী। সব জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত এটির নির্মাণকাজ শুরুর জন্য সর্বমহল থেকে দাবি উঠেছে।
এদিকে দ্রুত কাজ শুরু হবে বিধায় সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উপজেলা পরিষদের দ্বি-তল ভবনের মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলে পাশেই একটি অস্থায়ী মসজিদ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু মসজিদটি টিনসেড হওয়ায় বর্ষা হলেই পানি পড়ে। এতে করে মুসাল্লিদের নামাজ পড়তে খুব অসুবিধা হয়। আদৌ মসজিদ নির্মাণ হওয়া নিয়েও অনেকের মনে সন্দেহ দেখা দেয়।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানাযায়, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহার ছিল প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় উন্নত মসজিদ নির্মাণের। এরই আলোকে ”প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি (৫৬০) করে মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার প্রকল্প গ্রহন করা হয়।
জেলা পর্যায় চারতলা ও উপজেলা পর্যায় তিনতলা এ মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতি কেন্দ্রে একযোগে ৯০০ মুসাল্লিরা নামাজ আদায়ের সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া নারী ও পুরুষের আলাদা ওযু ও নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা, লাইব্রেরী গবেষণা ও দীনি দাওয়া, কোরআন হেফজ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোছলের ব্যবস্থা, হজ্জযাত্রীদের নিববন্ধন, প্রশিক্ষণ, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার ব্যবস্থা থাকবে।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের জুন মাসে টেন্ডারসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন হয়। এ উপজেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে মোঃ নূর হোসেন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত হন। প্রথমে উপজেলার জালঝাড়া ছিদ্দীকিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় এই মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের জন্য নির্ধারিত হয়। কিন্তু ওই জায়গাটি পৌরশহর থেকে দূরে হওয়ায় পৌরশহরের কাছাকাছি স্থানে নির্মাণের জন্য সর্বমহল থেকে দাবি উঠে। বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে পরবর্তিতে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে এই মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণের জন্য নির্ধারন করা হয়।
এরই প্রেক্ষিতে তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফী ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠান। সে মোতাবেক ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল তৎকালিন জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল পরবর্তি নির্মাণস্থলের জমির প্রস্তাব ইসলামি ফাউন্ডেশন-এর মহাপরিচালক বরাবর পাঠান। প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (উন্নয়ন) মোঃ সাখাওয়াত হোসেন স্বাক্ষরিত একটি পত্রে প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ওই স্থানে সয়েলটেস্ট, ডিজিটাল সার্ভে, মসজিদের স্ট্রাকচার ডিজাইন এবং ব্যয় প্রাক্কলন প্রস্তুতপূর্বক জরুরী ভিত্তিতে টেন্ডার আহবানের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য গণপূর্ত বিভাগের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলীকে অনুরোধ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গত ২ আগস্ট নির্মাণস্থল বুঝে দেওয়ার পরও অদ্যবদি কাজ শুরু হয়নি।
জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ড. হেলাল উদ্দীন বলেন, ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রাক্কলন ব্যায় ধরা হয়েছে, যা পরবর্তীতে আরও বর্ধিত করা হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে উপকরনের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠিকাদার এখনি কাজ করতে অনিহা দেখাচ্ছেন।
তার এই বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে ঠিকাদার কাজী মনিরুজ্জামান ক্ষোভ করে বলেন, অনেক আগেই ইট আনা হয়েছে। কাজ শুরু করতে তিনি জেলা প্রশাসক, গণপূর্ত বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন।
জানতে চাইলে জেলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, করোনার কারণে কাজ শুরু করা হয়নি। তবে, অচিরেই কাজ শুরুর আশ্বাস দিলেন তিনি।