মানি লন্ডারিং একটি ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু দেশে এই অপরাধ থামানো এখনো সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন পত্রিকান্তরে জানা গেছে, বিদ্যমান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধন করে একটি উপধারা সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যৌথ তদন্তকারী দলের কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব প্রদান করা হবে। বাস্তব সমস্যার আলোকে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বিধায় এটি প্রশংসার দাবি রাখে।
বাংলাদেশে ২০০২ সালে প্রথমবার মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন প্রবর্তন করা হয়। ৩০ এপ্রিল, ২০০২ তারিখ থেকে কার্যকর হয়ে এই আইনটি বলবৎ ছিল ১৪ এপ্রিল, ২০০৮ তারিখ পর্যন্ত। এই আইন অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি মানি লন্ডারিং অপরাধের তদন্ত করতে পারত। কোনো অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফৌজদারি কার্যবিধির (১৮৯৮ সালের ৫নং আইন) অধীনে যে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন, এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি একই রূপ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারতেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের এসব অপরাধ তদন্ত করার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র ধারণের অধিকার না থাকার জন্য তাদের পক্ষে তখন একটি তদন্তও কার্যকরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। আইনটির প্রয়োগ অধিকতর কার্যকর করার উদ্দেশ্যে ১৮ এপ্রিল, ২০০৭ তারিখ থেকে কার্যকর করে একটি সংশোধনীমূলক অধ্যাদেশ (নং-১৭, ২০০৭) জারি করা হয়। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে অপরাধগুলো দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ (২০০৪ সালের ৫নং আইন)-এর তফসিলভুক্ত অপরাধ হিসেবে র্দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক তদন্তযোগ্য করা হয়।
বর্তমানে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লেনদেন বা সম্পদের তথ্য সংগ্রহের জন্য বিএফআইইউ সবগুলো ব্যাংককে অতি গোপনীয় পত্র প্রেরণ করে। এসব পত্র ব্যাংকের হাতে পৌঁছার পর পরই সংবাদটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং পত্রিকায় ছাপা হয়ে যায়। অর্থাৎ গোপন কথাটি আর গোপন থাকে না। সংবাদটি কীভাবে প্রচারমাধ্যমের কাছে গেল তাও জানা সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের তথ্যভা-ারে বিএফআইইউর প্রবেশাধিকার প্রদত্ত হলে সংবাদ সংগ্রহের প্রয়োজনে আর চিঠি লিখতে হবে না। বিএফআইইউ কর্মকর্তারা নিজেদের অফিসে বসেই অনলাইনে তদন্ত করে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। পৃথিবীর অনেক দেশেই ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের জন্য এই সুযোগ রক্ষিত আছে। প্রয়োজনবোধে বাংলাদেশেও এই সুযোগ অবারিত করা যায়।
এ দেশে ভূমি, ফ্ল্যাট ইত্যাদির মালিকানার কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যভা-ার নেই। আবার ইমিগ্রেশন, আয়কর, পাসপোর্ট, গাড়ি রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি খাতে তথ্যভা-ার থাকলেও বিএফআইইউর প্রবেশাধিকার নেই। ফলে কোনো সন্দেহজনক ব্যক্তির অন্যান্য সম্পদ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। অপরাধীদের শনাক্ত করার প্রয়োজনে এসব তথ্যভা-ারে বিএফআইইউর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) দায়িত্ব হচ্ছে অপরাধীদের সম্পদ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে কেবল সন্দেহজনক বলে চিহ্নিত লেনদেন বা কার্যক্রমগুলো সম্পর্কে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া। এসব তথ্য প্রাপ্তির পর আরও তদন্ত করে নিশ্চিত হওয়ার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনি কার্যক্রম শুরু করবে। বিএফআইইউ যাতে দক্ষতার সঙ্গে সন্দেহজনক লেনদেনের এবং সম্পৃক্ত অপরাধ থেকে অর্জিত সম্পদ বৈধ করার প্রচেষ্টা সংবলিত কার্যক্রম চিহ্নিত করার লক্ষ্যে মানসম্পন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে সে লক্ষ্যেই আইনের সংশোধন করা প্রয়োজন। আইন যেহেতু বারবার সংশোধন করা যায় না, সেহেতু সরকার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নিয়ে প্রয়োজনীয় সবগুলো সংশোধনী একসঙ্গে আনবে এটাই কাম্য।