দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাকবিতন্ডা শুরু হয়েছে ভালই। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। এরপর গঠিতব্য নতুন কমিশনের ওপরই বর্তাবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন। এ কারণেই নতুন নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ নিয়ে আলোচনা এখন সর্বত্র। বলা যায় সবার দৃষ্টি এখন সেদিকে।
সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমাদের সংবিধানের ১১৮নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং ওই বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।‘
কিন্তু অতীতে সংবিধানের এই নির্দেশনা মোতাবেক নির্বাচন কমিশনে নিয়োগে কোনো আইন প্রণয়ন না হওয়ায় সরকারগুলো তাদের দলীয় ভাবধারায় বিশ্বাসী ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠন করেছে। এটি সুস্পষ্ট যে, কমিশনে নিয়োগে সুপারিশ দানের জন্য সার্চ কমিটি গঠনের যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা কমিশনে নিয়োগে সংবিধান নির্দেশিত আইন প্রণয়নের দাবিকে এড়িয়ে যাওয়ার একটি কৌশলমাত্র। কারণ আইন প্রণীত হলে একটি নির্ধারিত পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং কতগুলো বিধিনিষেধের আলোকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রদান করতে হবে, যার ফলে রাজনীতিবিদরা যাকে ইচ্ছে তাকে কমিশনে নিয়োগ দিতে পারবেন না।
দেখা গেছে, গত দুটি নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আগে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে দুটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। অ্যাডহক ভিত্তিতে সৃষ্ট ওই দুটি অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশে গঠিত রকিবউদ্দীন কমিশন ও নুরুল হুদা কমিশন তাদের চরম পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের মাধ্যমে আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে, যার ফলে জনগণের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ওপর ব্যাপক অনাস্থা এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে তীব্র শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
তাই সংবিধান মেনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই। তবে আইন প্রণয়ন করলেই হবে না, আইনটি হতে হবে জনস্বার্থে, দলীয় বা কোটারি স্বার্থে নয়। এতে প্রতিফলিত হতে হবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে জনগণের প্রত্যাশা এবং এটি প্রয়োগও হতে হবে জনগণের স্বার্থে, যাতে কয়েকজন সৎ, দলনিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পান। নাগরিকদের ভোটাধিকার কায়েম করার জন্য এবং দেশে গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করার লক্ষ্যে সরকার কার্যকরি পদক্ষেপ নেবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।