বাংলাদেশে মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯-এর ৯ ধারায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর যিনি নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও সুযোগ রয়েছে। ফলে প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে স্বেচ্ছায় কিডনি বিক্রি করতে রাজি হওয়ায় চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে অনেকেই অভিযোগ করেন না। এই সুযোগে কিডনি ব্যবসায় অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন। বগুড়ার কালাই উপজেলায় একটি চক্র কিডনি ব্যবসা করে আসছে নির্বিঘেœ গত ১০ বছর থেকে। এই চক্রটি তিন ধাপে কাজ করে। কিছু ব্যক্তির দায়িত্ব কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন, এমন ধনী রোগী খুঁজে বের করা। একপক্ষের দায়িত্ব অভাবী মানুষকে অর্থের প্রলোভনে কিডনি বিক্রিতে রাজি করানো। আরেক দলের দায়িত্ব কিডনি দাতা ও গ্রহীতার প্রয়োজনীয় ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষা ও ভারতে পাঠানো। দরিদ্র কৃষক সুজাউদ্দিন ম-ল জয়পুরহাটের কালিয়া উপজেলার বাসিন্দা। তিনি পাঁচ বছর আগে কিডনি ক্রয় বিক্রয় চক্রের ফাঁদে পড়েন। স্বজনদের না জানিয়ে চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে পাঁচবিবি সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারত যান চক্রের সদস্যদের সাথে। কিডনি সংগ্রহের পরে দুই মাস তাকে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখে চক্রের সদস্যরা। পরে আবার পাঁচবিবি সীমান্ত দিয়ে দেশে পাঠানো হলেও চুক্তি অনুযায়ী তাকে টাকা দেওয়া হয় নি বলে অভিযোগে প্রকাশ। অথচ কিডনি বিক্রির পাঁচ বছর পরেও চক্রের সদস্যরা সুজাউলের পিছু ছাড়ে নি। কিডনি সংগ্রহে এবার তারা তাকে দলে ভেড়ানোর টার্গেট করেছে। তার আত্মীয় স্বজনকে বুঝিয়ে কিডনি বিক্রি করতে রাজি করাতে চাপ দিচ্ছে। এমনকি তাকে ভয় দেখানো হচ্ছে তাকে হত্যা করার। ফলে অতিষ্ঠ হয়ে ১১ অক্টোবর কালাই থানায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন সুজাউল ম-ল।
তিনি মামলায় অভিযোগ করেন, ১০ বছরে চক্রটি কালাই ও আশেপাশের এলাকার পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির কিডনি বিক্রি করেছে। আর র্যাব বলছে, এ চক্রের ফাঁদে পড়ে যে শতাধিক মানুষ কিডনি বিক্রি করেছেন, তাদের অধিকাংশই জয়পুরহাটের বাসিন্দা। কিডনি গ্রহীতার কাছ থেকে চক্রের সদস্যরা ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নেয়। আর কিডনি দাতার সাথে চুক্তি হয় চার লাখ টাকায়। কিডনি দাতাকে দু’লাখ টাকা অগ্রিম দেয়া হয়। কিডনি দেবার পর বাকি টাকা না দিয়ে টালবাহানা করে আর পরিশোধ করে না।
কিডনি দেয়ার পর থেকে সুজাউল ম-ল নানা শারীরিক সমস্যা ভোগ করছেন। মামলাটি তদন্তের জন্য র্যাব আবেদন করেছে। তদন্ত যে সংস্থাই করুক, তদন্ত নিরপেক্ষ ও বাস্তনিষ্ঠ হতে হবে। দোষীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে আর কেউ গরিব অসহায় মানুষকে প্রলভোন দেখিয়ে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রিতে উৎসাহিত করতে না পারে।