শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমরা চাই না, শিশুরা অকালে ঝরে যাক। আমরা চাই শিশুরা গড়ে উঠুক সুন্দর পরিবেশে, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা নিয়ে। বাংলাদেশকে আমরা সেভাবে গড়ে তুলতে চাই।'
প্রধানমন্ত্রীর কথাগুলো সুন্দর। তাঁর চাওয়াটা যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে ব্যাপারটা হবে আরও সুন্দর।
শান্তিময় পৃথিবীর অন্বেষণ মানব সভ্যতার আদি লক্ষ এবং নিঃস্বার্থ ভালবাসাই সেই লক্ষ্য পূরণের একমাত্র হাতিয়ার। শিশুরা সৃষ্টির জন্ম লগ্ন থেকে নিঃস্বার্থ ভালবাসার একমাত্র প্রতীক। তথাকথিত আধুনিক সভ্যতার জাঁতাকলে পিষ্ট এই নিঃস্বার্থ শিশুর পরিচয় আজ বিভক্তিময়। আজ তার একটি অংশ সমাজে বিবেচিত ‘পথ শিশু’। ‘পথ শিশুর সংজ্ঞায় বলা হয় সমাজে যারা সকল প্রকার সুবিধা বঞ্ছিত,রাস্তাই যাদের জীবন,ভিক্ষা করা যাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।এই ‘পথ শিশু’ উপাধি আমার নিকট খুব আপত্তিকর। আমরা কি কখনও সমাজের উঁচু শ্রেণীর শিশুদের যারা আধুনিক সকল সুবিধা প্রাপ্ত ,যারা ইট তক্তার তৈরী গৃহে বাস করে,তাদের কি আমরা ‘গৃহপালিত শিশু’ নামে ডাকি।এই কথার উত্তরে একটাই উত্তর ’অবশ্যই না’। তবে এই সকল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কেন আমরা পথ শিশু নামে অভিহিত করব।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের এক জরিপে বলা হয়েছে, সারা দেশে ১০ লক্ষাধিক পথশিশু রয়েছে। এদের মধ্যে ৫ ভাগ পথশিশু অস্থায়ীভাবে বসবাস করে রাজধানীতে, বাকি ৯৫ ভাগ সারা দেশের বিভাগ ও জেলা শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
পরিসংখ্যানে পথশিশুর সংখ্যা রাজধানীর পরের অবস্থানে আছে শিল্পনগরী টঙ্গী। এসব পথশিশুর বেশির ভাগই বিপজ্জনক হারে মাদক সেবনে আসক্ত হচ্ছে। একটি এনজিওর প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, পথশিশুদের ৮৫ ভাগই কোনো না কোনো মাদক সেবন করে। এ ছাড়া ধূমপান করে না এমন পথশিশু খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রথমে তারা ধূমপানে আসক্ত হয়ে পর্যায়ক্রমে গাঁজা থেকে শুরু করে সব ধরনের মাদকই স্পর্শ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মাদকাসক্তির একপর্যায়ে শিশু-কিশোররা অপরাধীদের সাথেও যোগ দিচ্ছে। এতে বলা হয়, ৪৪ ভাগ পথশিশুর সাথে পুলিশের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যার ফলে তারা যেকোনো অপরাধ করতে ভয় পায় না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শতকরা ৩৪ দশমিক ৮ ভাগ পথশিশু কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাস করে ১ থেকে ৬ মাস। ২৯ ভাগ পথশিশু স্থান পরিবর্তন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কারণে, আর ৩৩ ভাগ পাহারাদারদের কারণে।
আজকের শিশুরাই আগামী দিনের সম্পদ। তাদের মধ্যে সুপ্ত থাকে কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, চিকিৎসক ইত্যাদি প্রতিভা। তাই পথশিশুদের সমাজের মূল¯্রােতে ফিরিয়ে এনে তাদেরকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পদে পরিণত করতে সবার আগে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। পথশিশুদের পুনর্বাসনেরর জন্য সেবামূলক কর্মসূচি আরও বাড়াতে হবে। বিশেষ করে ড্রপ-ইন সেন্টার (ডিআইসি), উন্মুক্ত পথশিশু স্কুল, শেল্টার, মনোসামাজিক কাউন্সেলিং এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি। পথশিশুদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেয়া দুরূহ কাজ, তবে অসম্ভব নয়।