রাজধানী ঢাকার শব্দ দূষণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। পুরো মহানগরীর রাজপথগুলো যানজটের কারণে যন্ত্রচালিত গাড়িগুলো গালাতার হর্ন বাজাতে থাকে। অসংখ্য গাড়ির হর্নের আওয়াজে পথচারী বা গাড়িতে অবস্থানকারী মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। পথের পাশে স্কুল, কলেজ বা হাসপাতাল আছে কি না, তা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নাই। হাতের কাছে হর্ন আছে, যতো উচ্ছে বাজাও। কখনো কখনো মনে হয় গাড়িগুলো হর্ন বাজানোর প্রতিযোগিতায় মেতেছে। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও দেদারসে সবাই তা ব্যবহার করছেন। অথচ এসব দেখভাল করার কাউকে দেখা যায় না। বাংলাদেশের শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০০৬ অনুসারে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশেপাশের ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এসব এলাকায় রাতে ৪০ ডেসিবল ও দিনে ৫০ ডেসিবল শব্দ মাত্রা নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু যন্ত্রচালিত গাড়িগুলো তা মানছে কিনা তা মনিটরিংয়ের বিষয়টি চোখে পড়েনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের বর্ধিত ভবন-২-এর পেছনের রাস্তার গড় শব্দ মাত্রা প্রায় ৮০ ডেসিবল। এতে ওই আবাসিক হলে বসবাসরত ছাত্রদের শুধু পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছে না, সাথে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও পড়ছেন তারা। অন্যদিকে রাস্তার অপর পাশে শেখ হাসিনা বার্ন এ- প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট অবস্থিত। সেখানে অনেক মরণাপন্ন রোগী স্বাস্থ্য সেবা নিতে অবস্থান করেন। সেদিকে কেউ লক্ষ্য না করে গাড়ি চালকরা হর্ন বাজিয়ে নির্বিঘেœ যাওয়া আসা করছেন। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল কর্তৃপক্ষ শব্দ দূষণ রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে বারবার আবেদন নিবেদন করে দৃশ্যত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি। কর্তৃপক্ষ যেন লাগাতার শীত নিদ্রায় ব্যস্ত।
এমন অবস্থা সারা রাজধানীর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল সামনে হর্ন বাজানো নিষেধ লিখা সাইন রোডে রাস্তার দুপাশে টাঙ্গানো থাকলেও সেদিকে কোনো গাড়ি চালকের দৃষ্টি নেই। যানজটে পড়ে হর্ন বাজাবার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত সবাই। তাতে যে শব্দ দূষণ হচ্ছে, তা নিয়েও ভাবনা নেই কারো। তারা যে আইন অমান্য করছেন, তাও ভাবেন না কেউ। এজন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা কোনো চালককে শাস্তি দিয়েছেন তাও শোনা যায় না।
এমনিতেই ঢাকার বাতাসে ধুলাবালির কারণে মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে। তারপর শব্দ দূষণের প্রতিক্রিয়ায় আরো অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একটু সচেতন হলেই শব্দ দূষণ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব, সম্ভব স্বাস্থ্য সুরক্ষা করা। এজন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতা বাড়াতে হবে। সেই সাথে শব্দ দূষণ প্রবণ এলাকায় সংশ্লিষ্টদের জোর মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। আর তা যতদ্রুত সম্ভব, ততোই মঙ্গল।