বাজারে লাগামহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্য পণ্যের দাম। যেন বাজার দরের লাগাম এখন কারো হাতে নেই। নানান অজুহাতে দাম বাড়ছে চাল, আটা, ডাল, চিনিসহ সকল নিত্যপণ্যের দাম। ফলে সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষ বাজার করতে এসে হিমশিম খাচ্ছেন। দিনের পর দিন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার সঠিক কারণ কারো জানা নেই। তবে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্নমহল দায়ী করছেন মজুতদার ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে। কারণ তাদের কারসাজিতে বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রিতহীন।
দৌলতপুর, খালিশপুরের চিত্রালী বাজার ও দিঘলিয়ার সেনহাটি বাজারসহ নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৭০ টাকায়। সিদ্ধ চালের দামও বেড়েছে সমানতালে। পারি সিদ্ধ চাল ৫২ থেকে ৫৫টাকা, জিরা শাইল ৬৫ টাকা, হাফ সিদ্ধ নাজির শাইল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, আতপ পাইজাম ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা, মিনিকেট ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা, কাটারি সিদ্ধ ৯৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা, কাটারি ৬৫ টাকা থেকে ৭৫ টাকা, চিনিগুড়া ৯০ টাকা থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মসুরের ডাল বড় ও মোটা ৯০ টাকা, ছোট ১৩০ টাকা, ছোলার ডাল ৭৫ টাকা, বুটের ডাল ৪৫ টাকা, চিনি ৮৫ থেকে ১০০ টাকা, আটা ৩৮ থেকে ৪২ টাকা, ময়দা ৪৮ থেকে ৫২ টাকা, পিঁয়াজ ৬০ টাকা, রসুন ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুধু চাল ও ডাল নয়, সকল ভোগ্যপণ্যের দাম মাসের ব্যবধানে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। নিত্যপণ্যের এমন দাম বৃদ্ধিতে স্বল্প আয়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে করে তুলেছে দুর্বিষহ।
দৌলতপুর বাজারে বাজার করতে আসা রুপা বেগম এ প্রতিবেদককে জানান, সকল নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে কিন্তু মানুষের আয় তো আর বাড়ছে না, ফলে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের উপর নির্ভর করা পরিবারগুলোর অবস্থা এখন দুর্বিষহ। একটা কিনলে আরেকটা কিনতে পারছি না।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে দেশের বাজারেও লিটারে সাত টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। যা আগের দর ছিল ১৫৩ টাকা। নতুন দামে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল মিলগেটে দাম ১৩৪ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১৩৫ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৩৬ টাকা। বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল মিলগেটে ১৫০ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১৫৪ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল মিলগেটে ৭২০ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৭৪০ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ৭৬০ টাকা। আর পাম তেল প্রতি লিটার মিলগেটে ১১৬ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১৭ ও খুচরা পর্যায়ে ১১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ দাম পরিবেশক ও খুচরা পর্যায়ে পুরোনো মজুতকৃত তেলের ওপর কার্যকর হবে না।
বাজার করতে আসা ইয়াসিন মোড়ল বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। চাহিদা কমাতে বাধ্য হচ্ছি। আগে ৫ লিটার তেল নিলে এখন ৩ লিটার দিয়েই চালাচ্ছি।
দেশের মোট চাহিদার ৯৫ শতাংশ ভোজ্য তেল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ২০২০ সালের পর থেকে ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতির জন্য দেশে কয়েক দফায় সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তেলসহ সব পণ্যের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে কথা হয় কয়েকজন বিক্রেতাদের সাথে। তারা অভিযোগের আঙুল তুলছেন অধিক মুনাফা লোভী মজুতদার ও পাইকারীদের দিকে। দিঘলিয়ার সেনহাটি বাজারের ব্যবসায়ী খান হাফিজুর রহমান বলেন, নিত্যপণ্য সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে তা ঠিক কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই। মজুতদাররা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। বিভিন্ন চার্জ ও শুল্ক বৃদ্ধির অজুহাতে দাম বাড়াচ্ছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা। বাধ্য হয়ে আমাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
দিঘলিয়ার পথের বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকার যদি পণ্যের সঠিক চাহিদা নির্ধারণ করে আমদানি নিশ্চিত করে তাহলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসতে পারে। বাজার মনিটারিং নেই বললেই চলে। বাজার মনিটারিংয়ের মাধ্যমে মজুতদারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে চাহিদা ও সরবরাহ সমানতালে চলবে। আশা করা যায় এভাবে পণ্যের দাম সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে থাকবে।