২য় ধাপে ১১ নভেম্বর বগুড়ার শেরপুরের ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আ.লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিক নিয়ে, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী(স্বতন্ত্র), বিএনপির পক্ষ থেকে সরাসরি ভোটে অংশগ্রহণ না করলেও বিএনপি সমর্থিত বা কোথাও আবার পোস্টেট নেতারাও (স্বতন্ত্র), জামায়াত সর্থমিত(স্বতন্ত্র), ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দল সমর্থিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের প্রচার-প্রচারণা। এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নৌকা প্রতিক উপহার দিয়ে স্ব-স্ব প্রার্থীরা মনোয়নপত্র জমা দিয়ে নির্বাচনে মাঠে নামলেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। শেরপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৫টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে ৭জন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত (নৌকা প্রতিক) প্রার্থীর সাথে সাথে আ.লীগ বিদ্রোহীরা নির্বাচনী মাঠে থাকায় স্থানীয় নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আবার প্রার্থী বাচাই ও তৃণমূল জরিপে অসংগতি থাকায় আ.লীগ দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অনেক ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী, স্বতন্ত্র (বিএনপি সমথিত) প্রার্থীর পক্ষেও গোপন প্রচারণাও চলছে বলে এমন অভিযোগও রয়েছে নির্বাচনী মাঠে। এদিকে দলীয় প্রার্থীদের বিপক্ষে বিদ্রোহীরা মাঠে থাকায় অনেকটাই বেকায়দায় রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ। ফলে জয়ের আশা নিয়ে শঙ্কিত আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থীরাও।
জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে অনেক নেতাকর্মী চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও মূলত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর ভূমিকায় আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেরপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ৪৩জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। এর ৯টিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন (নৌকা প্রতিক) নিয়ে ৯জন নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। তবে ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টিতে দলীয় প্রার্থী(নৌকা)র বিপক্ষে ৭জন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনী মাঠ গরম করে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেরপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি যথাক্রমে খানপুর ইউনিয়নে আ.লীগ মনোনীত(নৌকা প্রতিক) পেয়েছেন পরিমল দত্ত, সেক্ষেত্রে নৌকা প্রতিক চেয়ে ব্যর্থ হয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রাঞ্জু বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। তিনি উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি তারিকুল ইসলাম তারেকের বড় ভাই।
বিশালপুর ইউনিয়নে আওমীলীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান শাজাহান আলী(সাজা), তার বিপক্ষে বিদ্রোহী হিসেবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যান এস এম রাফিউল ইসলাম লাবু ও আ.লীগ মনোনয়ন বঞ্চিত সুধান্য চন্দ্র(তিনি আ.লীগ মনোনীত প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবোধ চন্দ্রের ছোট ভাই), এবং ইউনিয়ন আ.লীগের সাবেক নেতা একই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান। তবে জাকির হোসেন অবশ্য আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন চাননি বলে জানিয়েছেন।
ভবানীপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। তার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থি হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান সাজ্জাদ হোসেন। তিনি প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি তছির উদ্দিনের ছেলে।
উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নে আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন(নৌকা প্রতিক) পেয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান(জিন্নাহ)। তার বিদ্রোহী হিসেবে মাঠে রয়েছেন কৃষকলীগ নেতা টি এম গফুর। সীমাবাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান গৌরদাস রায় চৌধুরী। তার বিপক্ষে আওয়ামী বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কমিটির সাথে জড়িত। এছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নে জুলফিকার আলী সঞ্জু, খামারকান্দি ইউনিয়নে আবদুল মমিন মন্ডল, মির্জাপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মন্টু ও শাহবন্দেগী ইউনিয়নে নৌকা প্রতিক পেয়েছেন আবু তালেব আকন্দ। আবু তালেব উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ¦ আবদুস সাত্তার জানান, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যারা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হাই-কমান্ডকে অবগত করা হবে।
শেরপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারি রির্টানিং কর্মকর্তা মোছা আছিয়া খাতুন, গত ১৭ অক্টোবর ছিল মনোয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ও ২৬ অক্টোবর বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ২৭ অক্টোবর সকালে প্রতিক বরাদ্দ। তাছাড়া আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠ ও অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে আমরা সর্বদায় প্রস্তুত।