২০২০ সালের দিকে শুরুহয় করোনা মাহামারী। অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশেও শুরুহয় করোনা মহামারীর বিস্তার। করোনায় তখন আক্রান্ত হয়েছিল একের পর এক লোক। প্রতিদিন মারা যেতেন হাজার হাজার লোক।করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে মায়ের কাছে যেতেন না ছেলে এবং ছেলের কাছে যেতেন না মা। সব লোকই যেন তখন হীমসিম খেতে লাগল। তারই ধারাবাহীকতায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে “মেডিক্যাল অ্যাসিস্টান্ট” নামের একটি রোবট তৈরির কাজ শুরু করে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার সরকারি গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র শাওন সরদার সোলাইমান। তার উদ্ভাবিত রোবোটটি করোনা আক্রান্ত রোগীর বেডের কাছে গিয়ে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারে। রোগীকে পৌছে দিতে পারে ওষুধ ও তথ্য। এছাড়াও তার রোবটটি মানুষকে কোভিড-১৯ বিষায়ক বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সচেতন করতে পারে। বাসাবাড়িতে আগুন ও গ্যাস লিকেজ হলে সাথে সাথে মানুষকে সংকেতের মাধ্যমে সচেতন করে দিতে পারে। রোবটটির মধ্যে দেওয়া হয়েছে কির্তৃম বুদ্ধিমত্তা তার সামনে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনাই মনে রাখতে পারে। উদ্ভাবক শাওন জানায় তার রোবটটি তিনি ২০২০ সালের মার্চ মাসে ডেভেলপ করা শুরুকরে এবং বিভিন্ন ধাপে ধাপে এর কাজ শেষ করেন। শুধু তাই নয় তার রোবটটি তৈরির কিছুদিন পর দেখেন পথে-ঘাটে, বাসাবাড়িতে কিংবা হাসপাতালে অক্সিজেন এর অভাবে মারা যেতে লাগলো একের পর এক লোক। বিদেশ থেকে অধিক অর্থ দিয়ে আমদানি করতে হচ্ছে অক্সিজেন। তাও ঠিকমতো পাচ্ছেন না অক্সিজেন। এর অভাবটা যেন দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। স্বজনরা হারাচ্ছে তাদের প্রিয়জনদের। বুকভরা কষ্ট আর বেদনা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তারা। এই মর্মান্তিক হৃদয় ছোঁয়া দৃশ্য দেখে যে কারোরই হৃদয় ছুয়ে যাবে। এই সমস্যা সমাধাণ করার লক্ষে কম খরচে যাতে যেকোনো জায়গায় বসে খুব সহজেই অক্সিজেন তৈরি করা যায় এবং সেই অক্সিজেন যাতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে করোনা আক্রান্ত রোগীর কাছে খুব সহজেই পৌছে দেওয়া যায় সেরকমই একটি মেশিন তৈরি করেন তিনি। তার উদ্ভাবিত এই মেশিনটি পানি ও বাতাস থেকে অক্সিজেন তৈরি করে মানুষের শরীরে সরবারাহ করতে পারে। শাওন জানায় তার উদ্ভাবিত মেশিনটি বিক্রিয়ার মাধ্যমে পানিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন তৈরি হয় সেখান থেকে হাইড্রোজেনকে বাতসে উড়িয়ে দেয় এবং অক্সিজেনকে জমা রাখে এবং বাতাস থেকে শোষিত বিভিন্ন গ্যাস এর মধ্যে থেকে অক্সিজেনকে আলাদা করে অক্সিজেনকে জমা রাখে। দুই উপায়ে পাওয়া অক্সিজেনকে একত্রে করে রোগীর শরীরে সরবারাহ করার জন্য প্রস্তুত করা হয় এবং রোগীর শরীরে সরবারাহ করা হয়। তার মেশিন থেকে উৎপন্ন অক্সিজেনের পুরোটাই ফ্রেশ অক্সিজেন যেটা রোগির শরীরে সরবারাহ করার উপযোগী।
তিনি আরো বলেন তার উদ্ভাবিত মেশিনটি যদি ব্যাবহার করা হয় তাহলে কম করচে নিজেরাই নিজেদের দেশে অক্সিজেন তৈরি করতে পারব এবং বিদেশ থেকে অধিক মূল্যে অক্সিজেন আমদানি করতে হবেনা।
ইতিমধ্যে তার মেশিনটি করোনা আক্রাস্ত রোগীর শরীরে সরবারাহ করে দেখা হয়েছে এবং প্রতিটি কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
উদ্ভাবক শাওন সরদারের বাবা মো. দেলোয়ার হোসেন জানা, শাওন ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানমনস্ক। যদি সরকার ওর পাশে থাকে তাহলে একসময় এর চাইতে ভালো কিছু তৈরি করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। শাওনের এই উদ্ভাবন দেখে তার বাবা-মা এবং পরিবারের সকলেই খুশি। শাওনের এই উদ্ভাবন দেখে খুশি তার বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক। তারা বলেন, শাওনের এই আবিষ্কার দেখে আমরা সকলেই গর্বিত। আমরা আশা করি ও একসময় এর চাইতে ভালো কিছু তৈরি করে দেশ ও দেশের মানুষকে উপহার দিবে।
উদ্ভাবক শাওন সরদার বলেন, তার উদ্ভাবিত দুটি প্রোজেক্ট যদি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় তাহলে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। তিনি জনায় তার উদ্ভাবিত প্রতিটি প্রজেক্ট তার হাত খরচের টাকা দিয়ে তৈরি এবং অল্প সংখ্যক টাকা তার পরিবারের কাছ থেকে নিয়েছে। তিনি আরো বলেন যদি সরকার তার ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখেন তাহলে বাংলাদেশকে রোবোটিক্স সেক্টরে পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাতে পারববো ইনশাআল্লাহ।
এব্যাপারে সরকারি গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মো.জহিরুল হক জানায়, স্কুলছাত্র শাওন সরদার সোলাইমান একজন মেধাবীছাত্র তাকে যদি সরকার লেখাপড়ার জন্য সহযোগিতা করে তাহলে এই মেধাদিয়ে আরো ভালোকিছু আবিষ্কার করতেপারবে যা দেশে কল্লানময় হবে।
এব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাস্থ্য ও প.প.কর্মকর্তা ডাক্তার মো. বখতিয়া আল মামুন জানায়, করোনারোগির চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল অ্যাসিস্টান্ট রোবট ও অক্সিজেন উদ্ভাবিত মেশিন স্কুলছাত্ররা আবিষ্কার করাতে আমাদের দেশে উন্নতরদিকে এগিয়ে চলছে। আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।