তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৯টি ইউনিয়নে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে আওয়ামীলীগ। গত সোমবার দলীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলটির স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের মুলতবি সভায় দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন তালিকা চুড়ান্ত করা হয়। সরাইলের ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টিতে বর্তমান চেয়ারম্যান ও বাকি ৬টিতে নতুনদের দেয়া হয়েছে দলীয় মনোনয়ন। এরমধ্যে রয়েছে ২টি হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত ও তদন্তাধিন একটি অপহরণ মামলাসহ ১ ডজন মামলার আসামীও। তবে বিদ্রোহীর অভিযোগে তৃণমূলের মতামত না নিয়েই বাদ দিয়েছেন আওয়ামীপন্থী জনপ্রিয় ২ বর্তমান চেয়ারম্যানকে। এ ছাড়া অর্থের বিনিময়ে অনিয়ম করে অযোগ্য প্রার্থীদের নাম প্রেরণ করার অভিযোগে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে তৃণমূলে। ধাওয়ার কবলে পড়তে হয়েছে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতাকে। উপজেলা ও জেলাকে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ষ্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীরা। করেছেন সাংবাদিক সম্মেলনও। দলীয় সূত্র জানায়, সরাইলে প্রাথমিক পর্যায়ে মনোনয়নের পেতে প্রত্যেক আবেদনকারীর কাছ নেয়া হয় ১৫ হাজার ১শত টাকা। ৫৬ জন প্রার্থীর কাছ থেকে আদায় করেন ৮ লাখ ৪৫ হাজার ৬শত টাকা। গত ১৭ অক্টোবর তৃণমূলের সমর্থনের নামে উপজেলা সদরে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটায়। সকাল ১১টায় আসেন জেলা আ.লীগের সম্পাদক আল-মামুন সরকার। শুরূ হয় ভোটের আগে আরেক ভোট। এখানেও বিশাল কারিশমা দেখায় সরাইল আ’লীগ। সুবিধা বুঝে ইউনিয়ন গুলোতে ৩/৪/৫টি করে ভোট প্রদান বাধ্যতামূলক ঘোষণা আসতে থাকে। আবার ভোটের বিষয়টি বাহিরে প্রকাশ না করার অনুরোধও করেন তৃণমূলের নেতৃবৃন্দকে। শাহজাদাপুর ইউনিয়নে নেয়া হয়নি কোন ভোট। মনগড়া মত জেলার সহায়তায় তালিকা প্রেরণ করেন কেন্দ্রে। গত সোমবার মনোনয়ন বোর্ডের মূলতবি সভায় ৯ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের টিকেট পেলেন যারা- অরূয়াইল ইউনিয়নে ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম, পাকশিমুল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম, চুন্টা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ মো. হাবিবুর রহমান, পানিশ্বর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউপি আ.লীগের সভাপতি মো. দ্বীন ইসলাম, কালিকচ্ছ ইউনিয়নে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুসা মৃধার স্ত্রী রোকেয়া বেগম, সরাইল সদর ইউনিয়নে বিশিষ্ট ব্যবসায়ি ও সামজসেবক মো. সেলিম খন্দকার, নোয়াগাঁও ইউনিয়নে ইউপি আ.লীগের যুগ্ম আহবায়ক-৩ শফিকুল ইসলাম, শাহবাজপুরে ইউপি আ.লীগের সভাপতি খাইরূল হুদা চৌধুরী ও শাহাজাদাপুরে উপজেলা মহিলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মোসাম্মৎ আসমা বেগম। তবে তৃণমূলের ভোটের আগেই বাতিল ঘোষণা করেছেন সরাইল সদর ইউনিয়নের টানা তিনবারের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার ও শাহজাদাপুর ইউনিয়নের টানা দুইবারের চেয়ারম্যান (উপজেলা আ.লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য) রফিকুল ইসলাম খোকনকে। নৌকার টিকেট পাওয়া অরূয়াইলের শফিকুলের বিরূদ্ধে রয়েছে হত্যা (জিআর-৪৮/১৩, তাং-০২/০২/২০১৩ খ্রি. ও মামলা নং-২০, তারিখ-১২/০৫/২০১২ খ্রি.) অপহরণ (মামলা নং-১৭, তারিখ-১৮/১০/২০১৭ খ্রি.) ও মারামারির অভিযোগে অর্ধডজনেরও অধিক মামলা। ২টি হত্যাসহ ৮টি মামলার চার্জশীটও হয়ে গেছে। বর্তমানে তদন্তাধিন একটি অপহরণ মামলার আসামীও শফিক। এ ছাড়াও এখানে নৌকা পাওয়া অধিকাংশ প্রার্থীকে অযোগ্য ও দূর্বল বলছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। গত মঙ্গলবার প্রার্থী সিলেকশনে অনিয়ম ও অযোগ্য প্রার্থী দেয়ার প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহবায়করা। স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মো. আমিন খান, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হোসেন মিয়া বলেন, বাছাই পক্রিয়াটি ছিল স্থানীয় আ.লীগের আইওয়াশ নাটক। ভোটে প্রথম হয়েও মনোনয়ন পায়নি হোসেন। মোটা অংকের টাকায় উপজেলা ও জেলার নেতারা অযোগ্য লোকদের মনোনয়ন দিয়েছেন। জীবনে কোন দিন আওয়ামী লীগ করেনি সরাইলে এমন সব লোকও এখন নৌকার মাঝি। এরাই ডুবিয়ে দিবে নৌকা। তবে আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসেন বলেন, দলীয় নির্দেশ অমান্য করে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তার বিরূদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রার্থী সিলেকশনে কোন অনিয়ম হয়নি। যথাযথ পক্রিয়ায় আমরা জেলা কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রে তালিকা পাঠিয়েছি। সেখানে বোর্ড সভা করে মনোনয়নের জন্য চুড়ান্ত করেছেন। প্রসঙ্গত: আগামী ২৮ নভেম্বর সরাইলের ৯টি ইউনিয়নের ১০১টি কেন্দ্রে এক সাথে অনুষ্ঠিত হবে ইউপি নির্বাচন।