সরাইলে অনেক আগেই জাইকা প্রকল্পের ৭০ লাখ টাকার কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু প্রকল্প সিলেকশন ও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততার আলোচনায়ই পার হয়ে গেছে এক বছরেরও অধিক সময়। কাজ শুরূ হয়নি আদৌ। সদস্য সচিব উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন প্রকল্পের সভাপতি ইউএনও ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হচ্ছেন অনুমোদনকারী। আর ইউএনও বলছেন তিনি সভাপতি নন। প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আসলে সভাপতি কে? এ বিষয়টি এখনো পরিস্কার নয়। ভাইস চেয়ারম্যানরা বলছেন প্রথম দিকে উপজেলা ডেভেলপমেন্ট ফ্যাসিলেটিটর জাইকার কাজে আমাদের সম্পৃক্ততা গুরূত্বপূর্ণ বললেও এখন বলছেন কোন সম্পৃক্ততা নেই। স্বাক্ষরও লাগবে না। কি প্রকল্প দিয়েছেন? কোথায় দিয়েছেন? ওঁরা কিছু জানেন না।
জাইকা’র স্থানীয় প্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতর সূত্র জানায়, সক্ষমতা বৃদ্ধি যাচাইয়ের জন্য উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকান্ডের উপর ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। পাস মার্কস্ পেলে জাইকা উন্নয়ন প্রকল্প দিয়ে থাকেন। পদ্ধতি হচ্ছে আগে প্রকল্পের প্রেরণ করতে হবে। পরে অনুমোদন হলে দরপত্র আহবান করা হবে। ইজিবি’র মাধ্যমে দরপত্র গ্রহন ও ঠিকাদার সিলেকশন হবে। ঠিকাদারের কাজ শেষ হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন নিরীক্ষা শেষে সন্তোষ্ট হলেই বিল প্রদান করবেন। মান ভাল না হলে বা কোন অভিযোগ থাকলে বিল প্রদান করবেন না। ৫টি ধাপে টাকা দিচ্ছে জাইকা। প্রথম তিন কিস্তিতে পাস মার্কস্ পায়নি সরাইল উপজেলা। চতুর্থ কিস্তিতে পাস মার্কস্ পেয়েছে। পঞ্চম পর্যায়েও ভাল করেছে। তাই ৬০ লাখ টাকার প্রকল্পের তালিকাও চাচ্ছে জাইকা। কিন্তু চতুর্থ কিস্তির কাজই এখনো শুরূ হয়নি। তাই পঞ্চম কিস্তি নিয়ে চিন্তা করতে পারছেন না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের তালিকা দিতে ব্যর্থ হলে টাকা ফেরৎ যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জাইকা’র উপজেলা ডেভেলপমেন্ট ফ্যাসিলেটিটর মো. মনিরূল ইসলাম প্রকল্প প্রেরণে বিলম্বের কথা স্বীকার করে বলেন, চতুর্থ কিস্তির কাজের তালিকা পাঠিয়েছি। ২০ লাখ টাকায় হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা, ২০ লাখ টাকায় সদরের কুট্রাপাড়ায় ও কালীকচ্ছে দুটি কৃষি ড্রেইন নির্মাণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের জন্য ২০ লাখ টাকার বেঞ্চ তৈরী ও উপজেলার বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা কর্মচারিদের ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা। অনুমোদন আসলেই কাজ শুরূ হবে। চতুর্থ কিস্তির তালিকা তৈরীতে দীর্ঘসূত্রিতার পেছনে রয়েছে নানা তেলেসমতি। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ বলেন, জাইকার মনিরূল ইসলাম প্রথমে বলেছেন আমাদের ছাড়া প্রকল্পের কোন কাজই হবে না। উপজেলার স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে কাজ গুলো করতে হবে। আমি ৯টি স্থায়ী কমিটির সভাপতি। মাসিক সভায় আলোচনাও করেছি। দুটি প্রকল্পও দিয়েছিলাম। কিছুই হয়নি। এখন তিনি বলছেন আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। আমাদের ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। চতুর্থ কিস্তির প্রকল্প প্রেরণের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। উপজেলার অপর ৮টি স্থায়ী কমিটির সভাপতি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম বলেছেন একই কথা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক মৃদুল বলেন, আমি কোন ভাবেই এ প্রকল্পের সভাপতি নই। কেন আমাকে সভাপতি বলা হচ্ছে জানি না। ১ বছর আগে চতুর্থ কিস্তির প্রকল্প বাস্তবায়নের বরাদ্ধ মঞ্জুর হয়েছে। কিছুদিন পূর্বে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির প্রকল্পের কাজ শেষ করে আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে বিল উত্তোলন করতে হবে। নতুবা টাকা ফেরৎ চলে যাবে।