আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় ভাবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে সব ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় মনোনয়ন দিলেও বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ৬৯১ জন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন,তাদের অনেকে দলীয় সিদ্ধান্ত না মানায় দল থেকে বহিস্কার করা হলেও দলীয় কোন্দোল নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অবশ্য বেশ কিছু এলাকায় দলগত ভাবে কোনো প্রার্থী মনোনয়ন না দিয়ে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।তবে আতঙ্কের বিষয় হয়ে উঠছে নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই বাড়ছে উত্তেজনা ও সংঘাত-সংঘর্ষ। গত ২৯ অক্টোবর রাত থেকে ৩০ অক্টোবর বেলা ১১টা পর্যন্ত চার জেলায় সংঘর্ষ, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রাথী ও দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে চেয়ারম্যান প্রাথীসহ ৪২ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে ১৫ জন ,মাদারীপুরের কালকিনিতে ১৫ জন ,নাটোরে ৭ জন ও নওগাঁয় ৫ জন রয়েছেন।
প্রথম ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে ভোটের দিন সহিংস ঘটনায় কক্সবাজারে ২ জনের প্রাণহানি ঘটে। সবমিলিয়ে প্রথম ধাপের নির্বাচনের সহিংস ঘটনায় মোট ৫ জন প্রাণ হারান। আর দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের দু’সপ্তাহ বাকি থাকতেই গত ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ জন নিহত হয়েছেন। নির্বাচনের দিন আসতে না আসতে না জানি আরো কতজনের প্রাণহানি ঘটবে তা কারো জানা নাই। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাথীদের মাঝে যে উত্তেজনা ও সহিষ্ণুতা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে আতঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই।
বাংলাদেশে নির্বাচন সবসময় উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। ভোটাররা তাদের নেতা নির্বাচন করেন আনন্দপূর্ণ পরিবেশে। তবে দুঃক্ষজনক হলেও সত্য বেশ কিছুদিন থেকে নির্বাচন সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। ফলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রাণহানি ঘটছে। রাজনৈতিক কর্মশুচি নয় প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তারে এখন সংঘাত-সংঘর্ষ ক্রমেই বাড়ছে,ঘটছে প্রাণহানি,নষ্ট হচ্ছে সম্পদ। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সবসময় প্রার্থীরা তাদের স্থানীয় জনগণের সাথে যোগাযোগ ও আত্মীয়তার ওপর নির্ভর করে জয় পরাজয় নির্ধারণ করে। কিন্তু রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন শুরু হবার পরেই দলীয় তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মাঝে দ্বন্দ্ব - সংঘাত ক্রমেই বাড়ছে।
গণতন্ত্রের মূল কথাই হচ্ছে পরমত সহিষ্ণুতা। কিন্তু নির্বাচনের নামে যা ঘটছে তাতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বলার সুযোগ হারাচ্ছে। শুধু তাইনা আহত নিহতের তালিকা বাড়ছে প্রাথীদের মাঝে ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনায়। এটা চলতে দেওয়া উচিত নয়। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দলীয় প্রার্থীরা সহিংস ঘটনায় জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। সেই সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের মনিটরিংয়ের মাধ্যমে রুখতে হবে যেকোনো সহিংস ঘটনা।তাছাড়া নির্বাচন কমিশন সহিংসতার আশঙ্কায় আর কিছু করতে পারুক না পারুক নির্বাচন স্থগিত ঘোষনা করতে পারে। দেশ ও জাতির কল্যাণের কথা চিন্তা করে প্রার্থী ও সমর্থকরাও এ ব্যাপারে সচেতন হবেন এমনটাই প্রত্যাশা।