২০১০-১১ সালে রাজস্ব আয় ছিল ৪.৫ কোটি থেকে কিছুটা বেড়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জর্দার মাধ্যমে রাজস্ব আয় হয়েছে ১২.২ কোটি টাকা। গুলের ক্ষেত্রে ২০১০-১১ অর্থবছরে ছিল মাত্র ৩২ লাখ, ২০১৪-১৫ সালে হয়েছে ৬০ লাখ টাকা। অন্য একটি হিসাবে দেখা গেছে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ১৪.৩৬ কোটি টাকা যা তামাকখাত থেকে অর্জিত মোট রাজস্বের মাত্র ১%। অথচ মোট ৪ কোটি ১৩ লক্ষ তামাক সেবনকারির মধ্যে ২ কোটি ৫৯ লক্ষ (৬২%) ধোঁয়াবিহীন তামাকদ্রব্য সেবন করছে, যার মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। এত বিপুল সংখ্যক ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্য ব্যবহার হলেও সরকারকে উৎপাদনকারীরা রাজস্ব প্রদান করছে না। তামাক উৎপাদনে অগ্রসর ভৌগলিক অঞ্চলসমূহ পর্যবেক্ষণ করে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, জর্দা এবং গুলের প্যাকেটে রাজস্ব আদায় নির্ধারণী কোন চিহ্নই নেই যা রাজস্ব ফাঁকির প্রত্যক্ষ প্রমাণ। এছাড়াও, জর্দা ও গুলের প্যাকেটের ধরণ ও মাপের ভিন্নতা কর ফাঁকির পথ সুগম করে। বিএসটিআই - এর ১৫৫টি পণ্য তালিকায় ৬৪টি হচ্ছে খাদ্য দ্রব্য, অন্যগুলো কেমিকাল পণ্য, পাট পণ্য ইত্যাদি। তামাক পণ্য সেবন করা হলেও এটা খাদ্য পণ্য হিসেবেও উল্লেখ নেই তাই বিএসটিআই -এর অনুমতির ব্যাপার অস্পষ্ট। আর এই অস্পস্টতার রাস্তা ধরেই বলতে হচ্ছে রাষ্ট্র রাজস্বর জন্য নির্মম অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে পুরো জাতিকে আর ধর্মীয় আলেমদের একটি বড় অংশ নিজেরাই তামাকাসক্ত হওয়ার কারণে নির্মম মাদক পর্যন্ত পৌছে দিচ্ছে। এর প্রতিকারে রাজপথে না থেকে কেবল ক্ষমতায় আসার আর থাকার রাজনীতিকে পূজি করে নতুন দলও গঠিত হচ্ছে যখন, তখন দেশের মানুষের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা থেকে এই লেখার অবতারণা।
একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখবো- জর্দা দিয়ে পান খান পীর সাহেব, এমন পীর সাহেবের মুরিদ ধর্মচ্যুত যেমন, তেমন ধর্মচ্যুত স্বয়ং পীর সাহেবও। তাতে তিনি যত বড়ই ধর্মীয় আলেম হোন অথবা জালেম। এই আলেম আর জালেমদের ধর্ম জ্ঞান থাকা না থাকার চেয়েও বড় বেশি প্রয়োজন ছিলো ধর্ম মানার জ্ঞান থাকা। তা না থাকায় উত্তরাধিকারের পীরগীরি-বীরগীরির মধ্য দিয়ে যুগের পর যুগ চলছে ধর্ম বিক্রির মহা উৎসব। সেই উৎসবে বিবেকহীন হয়ে উঠছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। বাড়ছে ধর্মান্ধতা যেমন, তেমন জর্দা-ধুমপান-মাদকের পথে এগিয়ে চলছে ছাত্র-যুব-জনতা। তা থামানোর কোন ইচ্ছেই নেই এই সব বাংলাদেশী পীর আর ধর্মীয় আলেমদের। অথচ প্রতি শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় উম্মাদনা ছড়ানোর দায়িত্ব পালন করলেও জর্দা-ধুমপান-মাদকমুক্ত দেশ গড়ার জন্য কোন দায়িত্ব পালন তারা স্বাধীনতার ৫০ বছরেও করেনি। একটা মিছিলও জর্দা-ধুমপান-মাদকমুক্ত করার দাবিতে অথবা সচেতনতা তৈরির জন্য কোন কর্মসূচি করেনি এই সব পীর-ধর্মীয় আলেম, আওয়ামী লীগ-বিএনপি কিংবা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস কিংবা বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মত নিবন্ধিত ৪০ টি রাজনৈতিক দল। তবে বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৫০ বছরে রাজপথে সকল মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় বন্ধের দাবিতে আইন প্রণয়নের দাবিতে কর্মসূচি করেছেন নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবির প্রেসিডিয়াম মেম্বার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান আজাদের নেতৃত্বে ধারার রাজনীতিকগণ।
তবু বলবেন আমাদের ধর্মীয় নেতারা ধর্ম-মানবতার জন্য কাজ করছেন? মোটেই না। কারণ, তারা ধর্মকে ক্রমশ বিকৃত করার জন্য, নির্মম মিথ্যাচার-ব্যভিচার-অনাচার-অপরাধ-দুর্নীতির পাশাপাশি জর্দা-ধুমপান-মাদকদ্রব্যে বাংলাদেশের মানুষকে আসক্ত করার জন্য সিগারেট কোম্পানী-মাদকদ্রব্য বিক্রেতাদের মত সমান অপরাধী। সেই লোভি-বলাৎকারী-নেশা আসক্ত-নারী লিপ্সু-অপরাধী-দুর্নীতিবাজদেরকে কেন আমরা ধর্মীয় আলেম হিসেবে মাছের মাথা, মুরগীর রান, গরুর গোস্ত দিয়ে খাওয়াই দোয়া চাই- বেহেশতে যেতে চাই? কারণ আমরা ধর্মকে মুখে মুখে রাখি, বুকে রাখি না-ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করি না। কেবল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুলুল্লাহ(সা.) মুখেই বলি, কিন্তু এর মহা অর্থ বুে ক লালন করে এক আল্লাহ তা’য়ালায় বিশ^াসী হই না। যে কারণে নীতি বিবর্জিত কাজ করি, দুর্নীতি করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হই, একের পর এক গাড়ি-বাড়ি করি, কিন্তু মানবিক হই না, সত্যিকারের ধর্মভিরু হই না। কেবল মুখেই আমরা বলি ধর্মকথা-কর্মকথা, কাজে জিরো টলারেন্স স্বার্থের জন্য। সেই পীর-মুরীদ-ধর্মীয় আলেম-তথাকথিত রাজনীতিক আর রাজনৈতিক দলের মধ্যেই আছে ছাত্র-যুব-জনতাকে ধ্বংস করে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ঘুপটি মেরে থাকা ধর্ম-মানবতা বিরোধী শত্রু। এই শত্রুদেরকে প্রতিহত করার মধ্য দিয়ে জর্দা-ধুমপান-মাদকদ্রব্য বিক্রিয়-ক্রয় নিষিদ্ধ করতে হবে এখনই। মাদকদ্রব্য দমন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রিয় ক্ষমতাধর ও সাধারণ জনগনকে। যাতে করে বন্ধ হয়ে যায় অন্যায়ের প্রাথমিক ধাপ ধুমপান আর চূড়ান্ত ধাপ মাদকদ্রব্য।
বৃহত্তর মুসলিম অধ্যুষিত দেশ বাংলাদেশে তামাক ও মাদকদ্রব্যের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বেশি। এখানে প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মধ্যে ৪৩% ধোঁয়াযুক্ত ও বিভিন্ন ধরনের ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করেন, গাঁজা- ফেন্সিডিল-মদ- হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকে আসক্ত মানুষের সংখ্যাও ৮ ভাগ। যদিও ধূমপানের কারণে স্বাস্থ্য ক্ষতির বিষয়টি তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে প্রাধান্য পেয়েছে। ২০০৭ সালের জরিপে দেখা যাচ্ছে বছরে ৫৭,০০০ মানুষ মারা যাচ্ছে এবং কয়েক লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। কিন্তু জরিপে এটাও দেখা যাচ্ছে, মোট ৪ কোটি ১৩ লক্ষ তামাক সেবনকারীর মধ্যে ২ কোটি ১৯ লক্ষ (২৩%) ধূমপানের মাধ্যমে এবং ২ কোটি ৫৯ লক্ষ (২৭.২%) ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্য সেবন করেন। অর্থাৎ ধোঁয়াযুক্ত তামাক দ্রব্যেও চেয়ে সেবনের দিক থেকে ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্যের হার বেশি। দেশে আইনের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোড়ালোভাবে পরিচালনা করা হলেও এই সংখ্যা এখন বেড়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম মূলত ধূমপান (বিড়ি, সিগারেট) নিয়ন্ত্রণের জন্যে বেশি সক্রিয়, অন্যদিকে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য যেমন, সাদা পাতা, জর্দা, গুল ইত্যাদির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ২০১৩ সাল থেকে সংশোধিত আইনের আওতায় আনা হলেও এর ব্যবহার কমছে না। বাংলাদেশ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক গৃহীত ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ঋৎধসবড়িৎশ ঈড়হাবহঃরড়হ ড়হ ঞড়নধপপড় ঈড়হঃৎড়ষ (ঋঈঞঈ) কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে ১৬ জুন, ২০০৩ ও অনুস্বাক্ষর করেছে ১০ মে, ২০০৪ তারিখে। উক্ত কনভেনশনের বিধানাবলী বাংলাদেশে কার্যকর করার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক “ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫, (২০১৩ সালে সংশোধনী) প্রণীত হয়েছে। ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল) এফসিটিসিতেও তামাক পাতা থেকে তৈরি সব ধরণের পণ্যকেই ‘তামাক পণ্য’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংশোধিত আইনে ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের মধ্যে জর্দা, গুল, সাদাপাতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু আইন এবং বিধি প্রণয়নের সময় ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন ও ব্যবহার সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য না থাকায় এর নিয়ন্ত্রণে কৌশল নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তাই ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ বের করা জরুরী। নারীরা ধূমপানে কম দেখা গেলেও জর্দা, সাদাপাতা ও গুলের ব্যবহারে পুরুষের তুলনায় বেশি। এক হিসাবে দেখা গেছে প্রায় ১ কোটি ১ লক্ষ নারী ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বিভিন্ন দেশে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা কিংবা ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হলেও বছরের পর বছর চলে গেলেও বাড়ছে তামাক-মাদকাসক্তর সংখ্যা। আর আমাদের পীর-ধর্মীয়-রাজনৈতিক নেতারা সেই তামাক-মাদকাসক্তদের উপর ভর করে নিজেদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিল করছে বছরের পর বছর; যুগের পর যুগ। কেননা, তারা জানে- তামাক-মাদকাসক্তদেরকে খুব দ্রুত ধর্মীয় উন্মাদনায় ক্ষেপিয়ে দেয়া সম্ভব; সম্ভব হয় তাদের পকেটের অর্থ খুব দ্রুত নিজেদের মসজিদ-মাদ্রাসা আর ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের নামে আত্মসাৎ করছে; সেই টাকায় দামি গাড়িতে চড়ছে, দামি বাড়িতে থাকছে, রাজকীয় জীবন যাপন করছে।
পীরদের আর মুরিদদের সাথে সাথে তথাকথিত ধর্মীয় আলেমদের জর্দা দিয়ে পান খাওয়ার মধ্য দিয়ে নেশাদ্রব্যে অগ্রসরতার মধ্য দিয়ে আমজনতা জর্দা-ধুমপানে আসক্ত হয়ে উঠছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের কারণে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের প্রবণতা পুরুষের তুলনায় (২৬%) নারীদের মধ্যে বেশি (২৮%)। ধোঁয়াবিহীন বা চর্বনযোগ্য তামাক যেমন: জর্দা, গুল, সাদা পাতা প্রভৃতি ব্যবহারে মুখে ক্যান্সার, খাদ্যনালীতে ক্যান্সার, অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সার, হৃৎকম্পন বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের জটিল রোগ হতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে সন্তান জন্মদান সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে। যে মা ধূমপান করে প্রসবকালে তার বাচ্চার ওজন একজন অধূমপায়ী মায়ের বাচ্চার তুলনায় ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম কম হয়। প্রসবকালে শিশু মারা যাবার সম্ভাবনাও বেশী থাকে। ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার উপর তথ্য এখনও যথেষ্ট নাই। তাবিনাজের এক জরিপে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। ক্ষুদ্র শিল্প আকারে কারখানা পর্যায়ে জর্দা এবং গুল তৈরী হয়। অধিকাংশ সময় এইসব পণ্য ঘরোয়া পরিবেশে ছোট পরিসরে উৎপাদন করা হয়। কোন প্রকার সাইন বোর্ড ছাড়া, ছোট বাড়ি বা বাড়ির ভিতরে ১টি রুম নিয়ে অথবা নিজের বাড়িতে তামাক পণ্য তৈরী করছে। অনেক কারখানার নাম থাকলেও চেনা যায় না ভিতরে আসলে কি কি পণ্য তৈরী হয়। বিশেষ কায়দায় সাদাপাতা ভিজিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে পানের সাথে খাওয়ার জন্য বাজারে পাওয়া যায়। এইসব কারখানার কাজ করতে শ্রমিকদের খুব বেশি দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। জর্দা এবং গুল কারখানা খুব দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে। প্রচুর অনিয়ম রয়েছে এসব কারখানার উৎপাদন স্থানে। জর্দা, গুল ভ্যাট ও করের আওতাধীন পণ্য।
লধৎফধ, মঁষ, ংধফধঢ়ধঃধ তামাকজাত দ্রব্য, জর্দা, গুল, সাদাপাতা, কর আরোপতামাকজাত দ্রব্য, জর্দা, গুল, সাদাপাতা, কর আরোপতামাকজাত দ্রব্য, জর্দা, গুল, সাদাপাতা, কর আরোপ করলেও ধর্ম-মানবতার দিক থেকে কোন নির্দেশনা না থাকায় বেকড়েই চলছে তামাক-মাদকসেবন। ৩৮টি জেলা থেকে ২২৫ ব্র্যান্ডের জর্দা এবং ১৮ ব্র্যান্ডের গুলের তথ্য তাবিনাজের সদস্যদের গবেষণায় সংগ্রহ করা হয়েছে। ৩৮% জর্দা পাইকারী এবং ৩৭% খুচরা বিক্রি করে। জর্দার ক্ষেত্রে ৩১% কারখানার মাসিক গড় আয় ১১-২৫ হাজার টাকা, ৩৭ % কারখানার গড় মাসিক আয় এক লক্ষ টাকার বেশী। গুল কারখানার ক্ষেত্রে ৩৩% কারখানার মাসিক আয় ১০ হাজার টাকার কম, ৩৩% কারখানার মাসিক আয় ১১-২৫ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি কারণ বেশীর ভাগ কারখানা থেকে বিক্রিত পণ্যের পরিমাণ জানিয়েছেন। একটু গভীরে গিয়ে তাকালে দেখা যায়- তামাকজাত দব্য প্রধানত: পাইকারী বিক্রি করা হয় (৪০%)। খুচরা বিক্রি করা হয় ৩০% এবং ১৬% এজেন্টের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। জর্দা বেশীর ভাগ কৌটায় হয় (৫৫%), গুলও কৌটায় হয় (৫৪%)। কৌটা ৩ সাইজের পাওয়া যায়, ছোট, মাঝারি ও বড়। ছোট কৌটায় ১০ গ্রাম, মাঝারি কৌটায় ২৫ গ্রাম, বড় কৌটায় ৫০ গ্রাম জর্দা থাকে। দাম যথাক্রমে ১০, ২০, ৪৫ টাকা। স্বাভাবিকভাবেই পরিমাণের সাথে দামের পার্থক্য আছে যেমন, ১০ গ্রাম কৌটা ৫-৬ টাকা, ৪০ গ্রাম কৌটা ১০-২২ টাকা, ৫০ গ্রাম কৌটা ১৪-৫০ টাকা। কেউ কেউ কৌটার সাইজ অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করে, কেউ নিজের ইচ্ছায় মূল্য নির্ধারণ করে।
প্যাকেট ছাড়াও খোলা বা লুজ বিক্রি করে ১০ গ্রাম ৪ টাকায়। এছাড়া পলি প্যাকেটেও বিক্রি হয়, ২৫ গ্রাম প্যাকেট ১০ টাকা, ৪০ গ্রাম প্যাকেট ৪০ টাকা, ২০ গ্রাম প্যাকেট ১০-২৫ টাকা। গবেষণা থেকে ৯ রকমের সাইজ পাওয়া গেছে। যেমন, ১০০, ৭৫, ৫০, ৪০, ৩০, ২৫, ২০, ১৫, ১ গ্রাম পরিমাণ পর্যন্ত জর্দার কৌটা আছে। কয়েকজন জর্দা সেবনকারীর হিসাব নিয়ে দেখা গেছে একজন মধ্যবিত্ত নারী দিনে ৮ থেকে ১০টি খিলি পান জর্দা দিয়ে সেবন করেন, নিম্ন ও গরিব নারী তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক পান সেবন করেন, দিনে ২০ থেকে ২২টি খিলি জর্দাসহ। পানের দোকানের তথ্য হচ্ছে দিনে ৩০০ থেকে ৩৫০ খিলি পান বিক্রি করেন, এর মধ্যে ৮০-৯০% জর্দাসহ পান বিক্রয় হয়। টাকার অংকে দিনে ১৫০০ থেকে ১৭৫০ টাকার পান ও জর্দা বিক্রি হয়। ধোঁয়াযুক্ত এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমাবার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি হচ্ছে জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে করারোপ করে তামাক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া। কিন্তু তামাক দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি ও উচ্চ হারে করারোপ (চজওঈঊ গঊঅঝটজঊঝ) এর মতো কার্যকর পদক্ষেপ আইনে সুস্পষ্টভাবে নেই। এভাবে যেন দেশ আর না চলে, লোভি-লম্পট তথাকথিত রাজনীতিকদের হাত থেকে যেমন মুক্তি চায় দেশের মানুষ, তেমন মুক্তি চায় মাদক-তামাকের অভিশাপ থেকে। আর এ জন্য চায়-ধর্ম-মানবতার সুশিক্ষা...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি