প্রতিবছরই মানব পাচার উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠনের অভাব নেই, অভাব শুধু সঠিক কার্যক্রমের। প্রতিবছর কত মানুষ পাচারের শিকার হচ্ছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। এ মানুষগুলো পাচারের শিকার হওয়ার পাশাপাশি আরো কিছু অপরাধের শিকার হয়। যেমন- প্রতারণা, জোরপূর্বক শারীরিক মানসিক নির্যাতন, যৌন কাজে বাধ্য করা, মুক্তিপণ হিসেবে অর্থ আদায়, মাদক পাচারে ব্যবহার, দেহের অঙ্গ স্থানান্তর করে বিক্রি, বিপদজনক খেলাতে ব্যবহার এমনকি অর্থ না পেলে মেরেও ফেলার মতো অপরাধও ঘটছে।
চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, যশোর, লালমনিরহাট, জয়পুর হাট, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা ও কক্সবাজার-এ আট জেলার অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে ভারতে নারী পাচার হচ্ছে। এর বাইরে বিমান বন্দর ব্যবহার করে ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নারী পাচারে সক্রিয় রয়েছে একাধিক চক্র। নারী পাচারের বিভিন্ন ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেফতার হওয়া একাধিক চক্রের সদস্য ও দালালদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য জানতে পেরেছে র্যাব। নারী পাচারের জন্য রাজধানী এবং সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ‘সেফ হাউজ’ (পাচারের আগে যেখানে রাখা হয়) গড়ে তুলেছে পাচারকারী বিভিন্ন চক্র। র্যাবের তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর পল্লবী, উত্তরা, খিলক্ষেত্র, দক্ষিণ খান, দারুস সালাম, তেজগাঁও, রমনা, মতিঝিল এবং সদরঘাটে পাচারকারীদের সেফ হাউজ রয়েছে। পাচারের জন্য ফাঁদে ফেলা নারীদের প্রথমে ঢাকার কোনো সেফ হাউজে রাখা হয়। পরে সীমান্তবর্তী জেলায় অবস্থিত সেফ হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। সীমান্ত জেলায় অবস্থান করার সময় পাচারের শিকার নারীদের মুঠোফোন ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। এরপর সুবিধাজনক সময়ে চক্রের সদস্যরা নারীদের পাশের দেশে পাচার করে। শুধু স্থল পথেই নয়, তারা জলপথ ও আকাশ পথেও নারী পাচার করে থাকে। রাজধানী বিমান বন্দর ও কক্সবাজারের ঠেকনাফের জালিয়া পাড়া সাগর পথ ব্যবহার করে।
সীমান্ত জেলার বাইরে বিমানবন্দর দিয়ে ওমান, দুবাই, কাতার, সৌদি আরব, কুয়েত, মিশর ও জর্ডানে নারী পাচারে সক্রিয় পাচারকারী চক্র কয়েক ধাপে বিভিন্ন দেশে নারী পাচার করছে। তারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের কিশোরী ও তরুণীদের টার্গেট করে হাউজ কিপিং, নার্স, রেস্টুরেন্ট সহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োগের নামে মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচার করে। সামগ্রিক ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে এ জঘন্যতম অপরাধটি কোনো একক ব্যক্তির পক্ষে করা সম্ভব নয়। এ অপরাধের পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত। যে সব দেশে মানব পাচার হয়, সে সব দেশের দালালদের মধ্যে থাকে যোগসূত্র। দলবদ্ধ পরিকল্পনার মাধ্যমে এ অপরাধ সংঘটিত হয়। মানবতা বর্জিত এ অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি বিধান জরুরি। তাছাড়া মানব পাচারের ঘটনায় আমাদের দেশ ও জাতির ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। তাই র্যাব যে চক্রগুলোকে গ্রেফতার করেছে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করে মানব পাচার রোধে যথাযথ উদ্যোগ প্রয়োজন।