ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম বা আইটিএস সংযোজনের সিদ্ধান্তটি ছিল নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী। কিন্তু অর্ধশত কোটি টাকার তিন বছরের এ প্রকল্পটি ছয় বছরেও যেভাবে ঝুলে আছে, তাতে আদৌ এটি বাস্তবায়িত হবে কিনা সে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সময় এবং বাজেট বাড়লেও পদে পদে হোঁচট খেয়ে আইটিএস প্রকল্পে জ¦লছে 'লালবাতি'। সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানে কাটা পড়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ট্রাফিক সিগন্যালকে সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত করা তার। গত বছর চুরি হওয়া পৌনে তিন কোটি টাকা দামের সার্ভার কম্পিউটার ও বিশেষায়িত সফটওয়্যারের হদিস এখনও মেলেনি।
প্রকল্পের গোডাউনের কড়া পাহারা থেকেও গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের সার্ভার কম্পিউটার কীভাবে চুরি হওয়ার ব্যাপারটি সত্যিই বিস্ময়কর। আরও বিস্ময়কর হলো, থানা পুলিশ ও গোয়েন্দারা এখনও চুরি রহস্যের কিনারা করতে পারেননি। পৌনে তিন কোটি টাকা দামের সার্ভার বসানোর জন্য নতুন করে কম্পিউটার কেনা হয়েছে বটে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় সংবেদনশীল একটি প্রকল্পে চুরির ঘটনা নিকৃষ্ট নজির হিসেবেই থাকবে। এর মাধ্যমে প্রকল্পটির ব্যাপারে সংশ্নিষ্টদের দায়িত্বহীনতাও প্রকাশ পেয়েছে।
ইন্টারনেটের তারের জঞ্জাল অপসারণ অভিযানে মহাখালী ও গুলশানের আইটিএসের সংযোগের তার যেভাবে কাটা পড়েছে, সেটার দায়ও প্রকল্প-সংশ্নিষ্টরা এড়াতে পারেন না। হতাশার ব্যাপার হলো তার কাটা পড়ার ঘটনা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা জানেন না। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ থেকে এমন অভিযোগ এসেছে কিনা, তাও তাঁরা জানেন না। দায়িত্বশীলদের এমন উদাসীনতার কারণে প্রকল্পটির অর্থ পানিতে ভেসে যাওয়ার অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, রাজধানীতে মোট ৬২টি ব্যস্ত মোড়ের মধ্যে মাত্র চারটিতে আইটিএস স্থাপন করে যানজট নিরসন কতটা সম্ভব। আমাদের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে, ছয় বছর ধরেও এ চারটি মোড়ে আইটিএস স্থাপন করা যায়নি। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে যে ধরনের সমীক্ষার প্রয়োজন হয়, আইটিএসের ক্ষেত্রে তা হয়েছে কি? কারণ, রাজধানীর ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ে নাগরিক অভিজ্ঞতা ভালো নয়। বলা চলে বর্তমানে রাজধানীর সড়কে ট্রাফিক সিগন্যাল থাকলেও তা কার্যকর নয়, বরং ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারায়ই চলছে যানবাহন।
অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তির স্বার্থে সরকারি প্রকল্প গ্রহণের যে অভিযোগ রয়েছে, এ প্রকল্পটিও বস্তুত সে অভিযোগ থেকে কতটা মুক্ত, প্রশ্ন আছে এ নিয়েও। আমরা চাই, এ প্রকল্পটি নিয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক। সরকারি অর্থের এ নিদারুণ অপচয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একই সঙ্গে আইটিএস প্রকল্পের অচলাবস্থা কাটিয়ে তা ত্বরিত বাস্তবায়নে নজর দেওয়া জরুরি। রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে নাগরিক দুর্ভোগ কমাতে কর্তৃপক্ষ দীর্ঘমেয়াদে ব্যবস্থা নেবে এটাই প্রত্যাশা।