দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিক কর্মচারীদের বিরুদ্ধে খনি কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারসহ চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছেন বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় কয়লাখনি সংলগ্ন বৈগ্রাম চৌরাস্তার মোড়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন ও জাতীয় শ্রমিক লীগ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শাখার যৌথ উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পদক আবু সফিয়ান। এ সময় উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন, সংগঠনের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম রতন, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি, অর্থ সম্পাদক হযরত আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মানিক প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্য সংগঠনের সাধারণ সম্পদক আবু সফিয়ান বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার স্থানীয় শ্রমিকরা খনির সূচনা থেকেই প্রায় দুই যুগ ধরে ৪০ থেকে ৪৫ তাপমাত্রায় ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলন করছেন। ভূগর্ভের কয়লা শ্রমিকদের রক্ত কণিকায় মিশে গেছে। শ্রমিকদেরর রক্ত ও ঘাম ঝরানো প্রতিটি ফোটায় মিশে আছে জাতির পিতার সোনার বাংলা বিনির্মানের স্বপ্ন। গত বছরের ২৬ মার্চ বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে সরকার ঘোষিত লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করছিলাম। এরইমধ্যে খনির উৎপাদন ও উন্নয়ন কর্মকা- সচল রাখতে খনির শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি গত বছরের ৬ জুলাই খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপরও শ্রমিকদেরকে কাজে যোগদানে কালক্ষেপণসহ গড়িমশি শুরু করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে একই বছরের ২৫ জুলাই বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে গেলে রহস্যজনক কারণে কর্তৃপক্ষ কথা না বলে ৪১ জন শ্রমিক নেতাকর্মীর নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেন। একইভাবে চলতি বছরের ৮ মার্চ ২৩ জনকে আসামি করে পৃথক আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে দুই মামলাই আদালতে বিচারাধিন রয়েছে। বর্তমানে খনিতে কর্মরত ও কোয়েরেন্টাইনের বাইরে এখনও প্রায় ৯০০ শ্রমিক বেকার অবস্থায় বাড়ীতে অবস্থান করছেন। যাদেরকে আংশিক বেতন দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও মামলার আসামি শ্রমিক নেতাকর্মীদের চাকরিচ্যুত করায় এসব শ্রমিক দীর্ঘ ১৯ মাস ধরে বেকার হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দ্রুত মামলা প্রত্যাহার করে চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের চাকরিতে পুনর্বহালসহ তিন দফা দাবি পূরণ না হলে এ মাসেই দাবি আদায়ের জন্য কঠোর আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলা হবে। এরজন্য খনির উৎপাদন ও উন্নয়ন কাজে বিঘিœতা সৃষ্টি হলে এর দায়দায়িত্ব খনি কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
এ বিষয়ে খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী কামরুজ্জামান মুঠোফোন বলেন, শ্রমিকদের নামে দায়ের করা মামলা নিজ গতিতে চলবে। যেহেতু শ্রমিকরা চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধিনে কাজ করেন। সেহেতু তাদের কাজে যোগদান করানো আর না করানো পুরোটাই নির্ভর করে চীনা প্রতিষ্ঠানের ওপর। তবে চীনা প্রতিষ্ঠান করোনা পরিস্থিতিতে বর্তমানে কিছু কিছু শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আগামীতে অন্যদেরও কাজে নেওয়া হবে।