বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী এখন যথেষ্ট আধুনিক। তবে পুলিশ বাহিনীকে অনেকাংশে ডিজিটাল ও সময়োপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভব হলেও জনবল সঙ্কটে ধুঁকছে শিল্প পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে শান্তিপূর্ণ শিল্পবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর গঠিত হয় বিশেষায়িত ইউনিট শিল্প পুলিশ। বর্তমানে ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই ইউনিটে জনবল মাত্র তিন হাজার ৮১০ জন।
দেশে বর্তমানে যে হারে নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্পপার্ক, আইটি হাব, ইপিজেড, ছোট-বড় শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে সে তুলনায় শিল্প পুলিশের জনবল অত্যন্ত কম। এমনকি সংস্থাটির নেই নিজস্ব ভবন এবং শিল্পাঞ্চল থানাও। অথচ নিরাপত্তা প্রদান ও আইন প্রয়োগের জন্য নিজস্ব থানা থাকাও অপরিহার্য। যানবাহন ও আবাসন সঙ্কটও প্রকট। ফলে কোন শিল্পাঞ্চলে শ্রম অসন্তোষ, বিক্ষোভ, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ এমনকি দুর্ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হয় শিল্প পুলিশকে। অতঃপর বাধ্য হয়ে দ্বারস্থ হতে হয় সন্নিকটের নিয়মিত থানা-পুলিশ, র্যাব ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ওপর। কোন দেশে নিরাপদ শিল্পাঞ্চল তথা কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা না গেলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, নতুন শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা ও কর্মসংস্থান সম্ভব নয়। দেশে বিপুল সংখ্যক পোশাক ও পাদুকা শিল্পের বাইরেও ৮৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। প্রস্তাবিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ৩৭টি অঞ্চলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগও আসছে। সে অবস্থায় শিল্প পুলিশের জনবলসহ অনুষঙ্গিক সংক্ষমতা বাড়ানো অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে যথাযথ নিরাপত্তাসহ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে বিদ্যমান জনবলের বাইরে অতিরিক্ত ১২ হাজার শিল্প পুলিশ ও আনুষঙ্গিক লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানোর প্রস্তাব ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বর্তমানে ৬টি জোনের স্থলে নতুন ২৩টি জোন ও সাবজোন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রস্তাব করা হয়েছে শিল্পাঞ্চল থানা গঠনের। ২০১০ সালে গঠিত হলেও শিল্প পুলিশ মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় ২০১৭ সালের ১৫ জুন থেকে। কিন্তু শিল্পাঞ্চল থানা না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে নিয়মিত তদন্তসহ চার্জশীট প্রদান, রেকর্ড তথা নথি সংরক্ষণ ইত্যাদি। এমতাবস্থায় শিল্প পুলিশের জন্য পৃথক থানা গঠনের প্রস্তাব রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। আলাদা থানা গঠিত হলে শিল্পাঞ্চলের মালিক-শ্রমিকরা সহজেই সেখানে গিয়ে তাদের অভাব অভিযোগ দায়ের ও নিষ্পত্তি করতে পারবেন। ফলে স্বভাবতই অন্যান্য নিয়মিত থানাগুলোর ওপর চাপও কমবে অনেকাংশে। দেশের অব্যাহত অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন, নতুন নতুন শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের অনিবার্য স্বার্থে শিল্পাঞ্চলগুলোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করবে বলেই প্রত্যাশা।