পথেই লুট হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার আমদানিকৃত স্ক্র্যাপ লোহা। তাতে ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগেও তা বন্ধে প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। মূলত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানিকৃত স্ক্র্যাপ লোহা কারখানায় যাওয়ার পথেই লুটের ঘটনা। চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার কমপক্ষে ৩০টি স্পটে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটছে। ফলে কোটি কোটি টাকার লোকসানে পড়ছে ইস্পাত ব্যবসায়ীরা। ইস্পাত খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আমদানি করা স্ক্র্যাপ বন্দর থেকে কারখানায় নেয়ার পথে প্রায়ই লুট হয়ে যাচ্ছে। সীতাকুন্ড এবং নগরীর বিভিন্ন থানায় ওসব ঘটনায় অনেক মামলাও হয়েছে। স্পট এবং লুটের হোতারা চিহ্নিত হলেও অজ্ঞাত কারণে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। চট্টগ্রামের ইস্পাত কারখানাগুলোতে দেশের উৎপাদিত ইস্পাতের বেশির ভাগ উৎপাদন হয়। ওসব কারখানার কাঁচামালের জোগান দিতে ইস্পাত কারখানাগুলোকে প্রতি বছরই ৪০ লাখ টন স্ক্র্যাপ আমদানি করতে হয়। বিদেশ থেকে আমদানি করা ওসব ইস্পাত চট্টগ্রাম বন্দর হয়েই চট্টগ্রাম নগরী এবং জেলার বিভিন্ন কারখানায় যায়। কিন্তু বন্দর থেকে কারখানায় যাওয়ার পথে ট্রেইলার কিংবা ট্রাক ড্রাইভারদের সহায়তায় কন্টেইনার থেকে লুট হচ্ছে হাজার হাজার টন স্ক্র্যাপ লোহা। চট্টগ্রাম নগরীর স্ক্র্যাপ লোহা লুট করে এমন বেশ কয়েকটি চক্র নগরী ও জেলায় সক্রিয় রয়েছে। তারা কমপক্ষে ৩০টি স্পটে স্ক্র্যাপ লোহা লুট করে। ওই স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে জেলার কুমিরা রয়েল গেট, আব্বাসপাড়া, বাইপাস মোড়, জেলেপাড়া, ভাটিয়ারী শিপইয়ার্ড সংলগ্ন এলাকা, মাদানবিবির হাট, বার আউলিয়া, তেলের পাম্প এমএমটি গ্যারেজ, বারবকুন্ড, আনোয়ারা জুট মিল, সুলতানা মঞ্জিল, সীতাকুন্ড শেখপাড়া, বড় দারোগা হাট স্কেল ও মিরসরাই ফিলিং স্টেশন। নগরীর সদরঘাট, মাঝিরঘাট স্কেলের প্রবেশমুখ, বিশ্বরোডের মোড়, ধনিয়ালাপাড়া বায়তুশ শরফ মাদরাসার সামনে, দেওয়ানহাট ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে, ঈদগা কাঁচা রাস্তার মোড়, নয়াবাজার হাক্কানি পেট্রোল পাম্প, সল্টগোলা ক্রসিং, টোল রোডের টোলপ্লাজা সংলগ্ন চোচালা ব্রিজ, চিটাগাং ফিলিং স্টেশনের পর, শুকতারা পয়েন্ট, বাংলাবাজার বেড়িবাঁধ, ডিএবি গ্যারেজের সামনে, চৌধুরী ঘাটা অন্যতম।
সূত্র জানায়, স্ক্র্যাপ রপ্তানিকারকরা কন্টেইনার সিলগালা করে একটি বিশেষ সিল দিয়ে বাংলাদেশে চালান পাঠায়। কিন্তু ওই কন্টেইনার বন্দর থেকে ইস্পাত কারখানায় যাওয়ার পথে ট্রেইলার চালকদের যোগসাজশে প্রতি কন্টেইনার থেকে ২ থেকে ৩ টন স্ক্র্যাপ লোহা সরিয়ে ফেলা হয়। বন্দর থেকে কারখানায় যাওয়ার পথে একেকজন আমদানিকারকের প্রতি চালানে ৩০ থেকে ৩৫ টন লোহা লুট হয়। ফলে চালানপ্রতি ব্যবসায়ীদের ১৩ থেকে ১৮ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। আর এভাবে স্ক্র্যাপ লোহা লুট হওয়ার ফলে বছর শেষে ইস্পাত ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুন্ড সার্কেল) আশরাফুল করিম জানান, চালক ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তির যোগসাজশে চুরির ঘটনাগুলো ঘটছে। ইতিমধ্যে অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে সিএমপির উপ-কমিশনার পশ্চিম ওয়ারিশ আহমেদ জানান, বন্দর থেকে স্ক্র্যাপ লোহা কারখানায় নেয়ার পথে চুরি হয় এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিএমপির পশ্চিম জোনে গত ২ মাসে এমন ধরনের ৫টি মামলা হয়েছে আর ওসব মামলায় ২৯ জন গ্রেফতার হয়েছে। স্ক্র্যাপ চুরি বন্ধের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।