পথশিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পথশিশুদের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করানো হবে। শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে ওই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। যদিও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা দেশের সুবিধা বঞ্চিত অনুর্ধ ১৫ বছর বয়সী শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া এবং দক্ষতা উন্নয়নের কাজ করে। তবে তার মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে। আর পথশিশুদের শিক্ষার সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার সুযোগও ওই সংস্থাটির রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিভিন্ন সংগঠন দাবি মতে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ পথশিশু রয়েছে। তবে ওই পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এমনকি কারা পথশিশু আর কারা পথশিশু নয় তা নিয়েও রয়েছে ভিন্নমত। অনেকের মতে, বাংলাদেশের পথশিশুর প্রকৃত সংখ্যা জানতে হলে প্রথমেই পথশিশুর সংজ্ঞা ঠিক করতে হবে। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সার্ভে অনুযায়ী ওই সময় পথশিশু ছিল ৬ লাখ ৭৯ হাজার এবং ২০১৪ সালে ১১ লাখ ৪৪ হাজার এবং ২০২৪ সালে ওই সংখ্যা ১৬ লাখ হবে বলে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়ে থাকে বর্তমানে পথশিশুর সংখ্যা ১৩ লাখ। তার মধ্যে ঢাকা শহরেই সাড়ে ৪ লাখ পথশিশু রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারিভাবে পথশিশু কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য একটি ক্রস সেক্টর বডি থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পাশাপাশি শিশু বাজেট যথাযথভাবে ব্যয়ের জন্য একটি বাস্তসম্মত পরিকল্পনাও জরুরি।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট ঢাকা বিভাগে ৬৫টি, বরিশাল বিভাগে ২৫টি, চট্টগ্রামে ১১টি, সিলেটে ৫টি, রাজশাহী ২২টি, রংপুরে ৪৭টি খুলনা ১৬টি ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১৪টিসহ সারাদেশে ২০৫টি শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করানো হয়। শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত, হতদরিদ্র শিশুদের লেখাপড়া দক্ষতা অর্জন ও প্রয়োজনীয় শিক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়। সারাদেশে ২০৫টি শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত বিদ্যালয়ে শিক্ষা দেয়া হয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময়ের পর ৮৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং ট্রাস্টের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ৭৩টি বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করানো হয়। আর বাকি ৪৯টি ভাড়া করা পরিত্যক্ত ভবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নির্ধারিত সময়ের পর লেখাপড়া করার ব্যবস্থা নেয়া হয়। এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পথশিশুদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনার কাজ নতুন করে শুরু করা হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশে শিশুদের জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শিশু একাডেমি ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ৬৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রাক-প্রাথমিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। আর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদফতরের সরকারি শিশু পরিবার বাবা-মা নেই বা বাবা নেই এমন এতিম শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি শিশু পরিবার পরিচালনা করছে। সমাজসেবা অধিদফতরের ছোটমণি নিবাস বাবা-মায়ের পরিচয়হীন শূন্য থেকে ৭ বছর বয়সী পরিত্যক্ত, পাচার থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুদের লালনপালন ও সাধারণ শিক্ষা দেয়া হয়। আর বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন (বিএনএফ) নারী ও শিশুদের শিক্ষা দেয়ার কাজ করে।
এদিকে বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, পথশিশুদের পুনর্বাসন ও নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশুদের জন্য শিশুসদন প্রতিষ্ঠা এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা উন্নত ও প্রসারিত করা হবে। ‘একটি শিশুও রাস্তায় থাকবে না, রাস্তায় ঘুমাবে না’- প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নের সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রত্যাশিত অগ্রগতি অর্জন করতে হবে বলেও পরিকল্পনায় উল্লেখ আছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম জানান, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট পথশিশুদের শিক্ষার বিষয়টি বাস্তবায়ন করবে। শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা দেয়ার মতো সুযোগ আছে। বিদ্যালয় সময়ের পর তারা শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করানো হয়। এটি মূলত বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের (বিএনএফ) কাজ।