ব্যাংকের বন্ধকি সম্পদ বিক্রিতে জালিয়াতি বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেজন্য তদারকি জোরদার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে একটি সার্কুলার পাঠানো হয়েছে। এখন থেকে প্রতি ৬ মাস পরপর বন্ধকি সম্পদ বিক্রির তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। একই সঙ্গে সম্পদের মূল্য বিভিন্ন সময়ে কতো ছিল সেসব তথ্যও জানাতে হবে। পাশাপাশি সম্পদ মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করলে সে বিষয়েও কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পদ বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর পরিচালক ও সংশ্লিষ্টরা জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পদ বিশেষ করে জমি, ভবন বা অন্যান্য সম্পদ বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালক বা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নানাভাবে জাল জালিয়াতি করে আসছে। ওসব সম্পদের মূল্য কম দেখিয়ে কম মূল্যে বিক্রি করে সেগুলো পরিচালক বা তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কিনে নেয়। তাতে ব্যাংকের আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডাররা বঞ্চিত হয়। ওই প্রবণতা ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন প্রক্রিয়ায় তদারকি জোরদার করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে বকেয়া ঋণ আদায় বাড়াতে ব্যাংকগুলো বন্ধকি সম্পদ বিক্রি করছে। ওসব সম্পদ বিক্রির ক্ষেত্রে যাতে কোনো অনিয়ম না হয় সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দিষ্ট ছকে তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পদ জমি, ভবনসহ অন্যান্য নন ব্যাংকিং সম্পদ বিক্রি করে সেসব তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রতি ৬ মাস পরপর জানাতে হবে।
সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোর নন-ব্যাংকিং সম্পদ বিক্রির তথ্য প্রতি বছর জুন ও ডিসেম্বর ভিত্তিতে জানাতে হবে। ওই দুই মাস শেষ হওয়ার পর পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে ওসব তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে। সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নির্দিষ্ট ছকও পাঠিয়েছে। নন-ব্যাংকিং সম্পদের মধ্যে জমি, ভবনসহ অন্যান্য সম্পদের মধ্যে যেগুলো থেকে আয় হয় এবং যেগুলো থেকে আয় হয় না সেসব সম্পদের তথ্যও আলাদাভাবে দেখাতে হবে। আর সম্পদ বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ উল্লেখ করতে হবে। একই সঙ্গে সম্পদের বিভিন্ন সময়ের মূল্যের তথ্যও উল্লেখ করতে হবে। তার মধ্যে ৭ বছরের কম সময়ের, ৭ থেকে ১২ বছরের এবং ১২ বছরের বেশি সময়ের তথ্য উল্লেখ করতে হবে। ব্যাংকগুলো কী সম্পদ, কী পরিমাণে এবং কত টাকায় বিক্রি করা হয়েছে সেসব তথ্যও জানাতে হবে। এমনকি কোনো নন-ব্যাংকিং সম্পদকে স্থায়ী সম্পদে রূপান্তর করে থাকলে সেগুলোর তথ্যও জানাতে হবে।
সূত্র আরো জানায়, বন্ধকি সম্পদ বিক্রির ক্ষেত্রে ইতিপূর্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দুটি সার্কুলারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা জারি করেছে। তার মধ্যে ঋণ দেয়ার সময় বন্ধকি সম্পদের মূল্য কত ছিল। আর ঋণটি খেলাপি হওয়ার পর বিক্রির সময় তার মূল্য কত হলো। আগের মূল্যের চেয়ে বিক্রি মূল্য কম হলে কেন কম হলো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। আর ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য না হলে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। সেজন্য প্রয়োজনে ব্যাংকের এমডিকেও জবাবদিহি করতে হবে। কারণ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পদ বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্পদকে কম দামে নিলাম করে পরিচালক বা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে কেনা হয়েছে। এভাবে অনেক পরিচালক ব্যাংককে বঞ্চিত করে নিজেরা লাভবান হয়েছে। মূলত ওই প্রবণতা ঠেকাতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নন-ব্যাংকিং সম্পদের ওপর তদারকি বাড়িয়েছে।
এদিকে বর্তমানে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বন্ধকি সম্পদ ঋণটি খেলাপি হয়ে পড়লেই গ্রাহককে নোটিশ দিয়ে ব্যাংক সরাসরি তা বিক্রি করতে পারে। তাতে ঋণের টাকা পরিশোধিত না হলে ঋণ গ্রহীতার অন্য সম্পদের ওপর ব্যাংক অধিকার দাবি করে মামলা করতে পারে।